বয়সের চেয়ে রাজনৈতিক মামলা বেশি হওয়ায় আগে থেকেই আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর ছাত্রদল নেতা মেজবাহ উদ্দিন পিয়াস। সম্প্রতি একটি মামলায় তার ১৪ বছর সাজা হওয়ায় বিএনপির রাজনৈতিক পরিমন্ডলে তিনি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন।
পরিবার ও রাজনৈতিক দলের অভিযোগ, ‘এজাহার ও বাদী-সাক্ষীদের স্বাক্ষ্যগ্রহণে তার নাম না থাকলেও, চার্জশিটে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে।’ অবশ্য একই কথা বলছেন মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবীও।
জানা গেছে, পৌর শহরের চর গণেশ গ্রামের মৃত নুর নবীর ছেলে মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসের বয়স ২৪ বছর। ২০১২ সাল থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একে একে তার মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬টি। কারাবরণও করেছেন বেশ কয়েকবার। সবকটি মামলায় জামিন নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকেন তরুণ এ ছাত্রনেতা। নিজ দলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পিয়াস। ২০১৮ সালের আগস্টের শুরুর দিকে আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে তাকে অস্ত্রসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সব রাজনৈতিক মামলায় জামিন পেলেও আটকে যায় ২০১৩ সালের ২৫ মে সোনাগাজী ছাবের পাইলট হাই স্কুলের তখনকার ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী অপহরণ ও ধর্ষণ মামলায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র বড়ুয়া তাকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন। ওই মামলায় চলতি বছরের ২৫ মে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ প্রধান আসামির যাবজ্জীবন ও পিয়াসসহ চারজনের ১৪ বছর সাজা প্রদান করেন। একইসঙ্গে চারজনের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। অপর তিনজনের মধ্যে ২নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি একই এলাকার মো. হোসেন আহম্মদের ছেলে মো. রিয়াজ প্রকাশ রিয়াদও রয়েছেন।
পিয়াসের মা বিলকিছ আরা বেগম জানান, ২০১০ সালে এসএসসি পাশের পর বখতারমুন্সী শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয় পিয়াস। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে পিয়াস দ্বিতীয়। রাজনীতিতে জড়িয়ে একের পর এক মামলা-হামলার শিকার হয়। শত্রুতাবশত ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পিয়াসকে ফাঁসানো হয়েছে বলে মায়ের দাবি।
রায় ঘোষণার খবরে বিএনপি-ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় এজাহারে নাম না থাকা সত্ত্বেও চার্জশিটে আসামি বানিয়ে ছাত্রদলের দুই নেতা পিয়াস ও রিয়াদকে ১৪ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি পিয়াস এবং রিয়াদকে সাজা দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে করা ‘মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
পিয়াস-রিয়াদকে সাজা দেয়ায় ফেনী জেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় এজাহারে নাম না থাকা এবং পরবর্তীতে বাদীর কোনো জবানবন্দীতে উল্লেখিত নেতাদ্বয়ের নাম উল্লেখ না করার পরও সাজা দেয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। এই সাজা প্রমাণ করে যে, সারাদেশে গণতন্ত্রকামী জনগণের ওপরও এই ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আমরা নেতাদ্বয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।’
এদিকে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ইউসুফ আলমগীর চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘পিয়াস আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারি নাই। তুই এ মামলার আসামি ছিলি না। তোকে আসামি করা হয়েছে। বাদী ভিকটিম তোর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয় নাই। তোর নাম এজাহারে ছিল না। তবে ভাই, আমি তোর সব মামলায় জামিন করিয়েছি। এ মামলায় আমি তোর পক্ষে সরাসরি লড়তে পারিনি। কারণ আমি আগেই বাদীপক্ষে ছিলাম। তুই তখন আসামি ছিলি না। ভুল ছিল ভিকটিমকে পুনরায় রিকল করা। ভিকটিম যেখানে তোর নামই বলে নাই তাহলে ভিকটিমকে জেরা করার দরকার ছিল না। তাহলে রিকল কেন হবে? ভাই, মাফ করে দিস। কারাগারে যে কয়দিন থাকিস ভালো থাকিস। তোর জন্য শুভ কামনা।’