মির্জাগঞ্জে স্বামীকে তালাক দেয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীর দুহাত কেটে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সুমি আক্তার। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার গাজীপুরা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরা গ্রামের মো. হালিম ভান্ডারীর কন্যা সুমি আক্তার (২১) কে চার বছর আগে পাশ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার ঝোপখালী গ্রামের বারেক সিকদারের ছেলে মন্টু সিকদারের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী মন্টু সিকদার ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবী করেন। হত দরিদ্র সুমির মা অন্যের বাসায় কাজ করেন, ভূমিহীন বৃদ্ধ বাবা হালিম ভান্ডারী দিন আনে দিন খায়। যৌতুকের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় স্ত্রী সুমি আক্তারের উপর কথায় কথায় নির্যাতন চালাতো তার স্বামী মন্টু। এক পর্যায়ে ১ বছর আগে সুমি ও তার ৩ বছরের ছেলে নয়নকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। এর কিছুদিন পর পেটের দায়ে সে তার মা আলেয়াকে নিয়ে ঢাকায় একটি গার্মেন্সে চাকরী নেয়।
আহত সুমি আক্তার জানান, স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ঢাকায় একটি গার্মেন্সে চাকরী নেই। মা এবং ৩ বছরের ছেলে সন্তান নিয়ে কোন রকম দিন কাটাই। এদিকে স্বামী মন্টু মোবাইল ফোনে নানা রকম হুমকী ধামকী দেয়ায় মাস খানেক আগে আমি তাকে তালাক পাঠাই। ঈদের ছুটিতে গত রবিবার বাড়িতে আসলে খবর পেয়ে মন্টু সোমবার গভীর রাতে ঘরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। এতে সুমির বা হাতের কব্জির হাড় কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে এবং ডান হাতের কনুইয়ের উপরের অধিকাংশ কেটে যায়। মুমুর্ষু অবস্থায় সুমিকে প্রথমে মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। বরিশালে দু’দিন চিকিৎসার পর অজ্ঞাত কারণে কোন রকম ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই সুমির নাম কেটে দেয়া হয় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুমিকে নিয়ে আবার গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মির্জাগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন অসহায় পিতা হালিম ভান্ডারি। মির্জাগঞ্জ হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আব্দুর রহমান শামীম জানান, সুমির বা হাতের কব্জির হাড় ও ডান হাতের কনুইয়ের উপরে অধিকাংশ কেটে গেছে। সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারলে হয়ত মেয়েটি পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাচঁতে পারবে না।
সুমির মা আলেয়া বেগম জানান, জামাই মন্টু সিকদার গাজীপুরা গ্রামের স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় থেকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে যাতে ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত না গড়ায়। আমরা গরীব মানুষ কেস-মামলা বুঝিনা আমার মেয়েটা যেন প্রাণে বাঁচে আপনারা সে ব্যবস্থা করেন।
এ ব্যাপারে কাকড়াবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লোক মুখে শুনেছি। মেয়েটিকে নির্মমভাবে তারই স্বামী কুপিয়েছে। এ বিষয়ে একটি কুচক্রিমহল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি চিকিৎসা শেষ না হতেই বরিশাল থেকে ওই রোগীর নাম কাটিয়ে নিয়ে আসছে।
মির্জাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পায়নি। তবে এ ব্যাপারে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।