বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রী মিলি ইসলাম হত্যা মামলার আসামী কলেজ শিক্ষকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহনের অভিযোগ করেছেন নিহতের মা পারভীন খানম। আর্থিক সুবিধা গ্রহন করে আসামীকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আদালকে প্রেরন করে বলে অভিযোগ তার।
আজ বুধবার (১২ জুন) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত বিএম কলেজ ছাত্রী মিলি ইসলাম এর মা পারভীন খানম লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সামনে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি মেয়ের হত্যাকারী বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক পুলিন চন্দ্র সরকারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।
লিখিত বক্তব্যে পারভীন খানম বলেন, আমার মেয়ে মেধাবী ছাত্রী ছিলো। সে কখনোই আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মডেল স্কুল এন্ড কলেজের গনিত বিভাগের শিক্ষক পুলিন চন্দ্র সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়া সত্যেও সে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে মিলির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের পরে পুলিন আমার মেয়েকে বিয়ে করবে বলে আশ্বস্থ করে। আর পুরো এ বিষয়টি হত্যাকান্ডের ২ মাস পূর্বে আমরা জানতে পারি।
নিহতের মা অভিযোগ করেন, পুলিন একদিন আমাদের নথুল্লাবাদের বাসায় গিয়ে মিলি ও আমাদের হুমকী দেয়। সে মিলিকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। কারন সে বিবাহিত এবং তার সন্তানও রয়েছে বলে দাবি করে। এতে মিলি ক্ষুব্ধ হয় এবং পুনিলের স্কুলের অধ্যক্ষ এবং তার বাসায় জানানোর হুমকি দেয়। এমনকি অভিযোগ করার জন্য মিলি দু’দিন পুলিনের স্কুলে গিয়ে আবার ফিরেও আসে। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিন তাদের সম্পর্কের কথা কাউকে না জানানোর জন্য মিলিকে পরামর্শ দেয় এবং খুব শিঘ্রই তারা বিয়ে করবে বলে আশ্বস্থ করেন।
পারভীন খানম আরো বলেন, ঘটনার আগের দিন মিলি ও পুলিন ফিসারী রোডে বাসা নেয়। রাতে পুলিন বাসায়ও আসে। এর পর সকালে মিলির মৃত্যুর খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘরের দরজা খোলা পায়। মিলির একটি মোবাইল ফোনে পানি ভর্তি পাতিলের মধ্যে ডুবানো ছিলো। আর মিলি গলায় ওড়না দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলানো ছিলো। তবে তার পা মাটিতে কিছুটা ভাজ করা অবস্থায় ছিলো।
তিনি বলেন, ঘটনার পর পরই শিক্ষক পুলিন আত্মগোপনে চলে যায়। যে কারনে তার প্রতি সন্দেহ আরো গাড়ো হয়। তাই এই ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়। দীর্ঘ দিন পালিয়ে বেড়ানোর পরে মামলার আসামী পুলিনকে বরগুনা সদর থানাধিন ২নং গৌরীচন্ন এলাকা থেকে শিক্ষক পুলিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পারভীন খানম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ পুনিলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহন করে তাকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আদালকে প্রেরন করে। উক্ত মামলায় পুনিল চন্দ্র সরকার গত ৯ জুন আদালতের মাধ্যমে জামিনে মুক্তি পায়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তেব্যে পারভীন খানম বলেন, আমার মেয়েকে পুনিল ব্যবহার করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই হত্যার ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও অভিযুক্ত পুনিল এর গ্রেপ্তার দাবি করছি। তাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ইতমধ্যে পুনিল সরকার জামিনে মুক্তি পেয়ে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আমাদের হুমকী প্রদান করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরো একটি হত্যাকান্ড হবে বলেও তারা হুশিয়ারী দেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৩রা মে বরিশাল নগরের ২৮ নং ওয়ার্ডের ফিসারী রোডের আলী আজিমের ভাড়া বাসা থেকে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ছাত্রী মিলি ইসলামের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মিলি ইসলাম বিএম কলেজের মাস্টার্স (হিসাব বিজ্ঞান) বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিলো।