ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের চালক রমজান আলী। প্রায় নয় বছর ধরে এ সড়কে বাস চালান তিনি। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু চালুর পর এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি না থাকায় বেশ খুশি তিনি।
রমজান আলী বলেন, গত বছরের ঈদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে। কিন্তু এ বছর যানজট না থাকায় মালিক সমিতির বেঁধে দেয়া সময়েই চালকরা স্টেশনে পৌঁছতে পারছেন।
সিঙ্গাপুর ফেরত কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার লিটন মিয়ার অনুভূতিও একই। বিমানবন্দর থেকে দুপুরে প্রাইভেটকারযোগে কুমিল্লায় ফেরা প্রবাসী লিটন মিয়া বলেন, বিমান থেকে নেমে গত বছর যানজটে আটকে থাকার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বার বার মনে পড়ছিল। কিন্তু মেঘনা-গোমতী সেতু অতিক্রম করার সময় মনে হয়নি এটা বাংলাদেশের কোনো সেতু। মহাসড়কে কোথাও যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। ফোরলেন সড়ক দেখে মনে হয়েছে এটা যেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো সড়ক।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকার সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন নেই। এবার ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে কুমিল্লা রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
রোববার ছুটির দিন হলেও তিনটি ফোরলেন ব্রিজ ও রাস্তার কারণে দেশের লাইফলাইনখ্যাত এ সড়কে যানজট ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা রিজিয়নের হাইওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার, শনিবার ও রোববার সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী ও অন্যান্য প্রাইভেট গাড়ির চাপ বেশি ছিল। কিন্তু অন্যান্য বছর কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু এলাকায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকলেও এবারের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু চালুর পর রোববার কোনো যানজট ছিল না।
বিকেলে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসা রয়েল পরিবহনের চালক আবু তাহের বলেন, গত কোরবানির ঈদে দুইদিন আগে ছয় ঘণ্টায় কুমিল্লায় এসেছি। রোববার দুপুরে দুই ঘণ্টায় কুমিল্লায় পৌঁছতে পেরেছি।
কুমিল্লা বাস মালিক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নতুন তিনটি সেতু চারলেন বিশিষ্ট হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে আমাদের বাস সার্ভিস যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারছে, মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজট নেই। সব ফাঁকা।
দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রতি বছর ঈদ ছাড়াও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সেতু এলাকায় যানজটের যে ভোগান্তি ছিল, এ বছর তা নেই। মহাসড়ক পুরোপুরি ফাঁকা। শুক্রবার, শনিবার ও রোববার মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট ছিল না।
কুমিল্লা রিজিয়নের হাইওয়ে পুলিশের সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ যাতে কম সময়ে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে সেজন্য আমাদের সাত শতাধিক পুলিশ সদস্য রাস্তায় কাজ করছেন। আশা করি ঈদকে সামনে রেখে এ বছর কোনো যানজট থাকবে না এবং ভোগান্তিও হবে না।