পটুয়াখালীতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরপত্র সরবরাহ, প্রশ্নের উত্তরপত্র ফাঁস এবং অর্থনৈতিক লেনদেন এর ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে শিক্ষক, আইনজীবী, জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন দফতরের সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীসহ মোট ৩৬ জনকে আটক করেছে জেলে পাঠানো হয়েছে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আইনের আওতায় সর্বমোট ৫০ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
শনিবার আটকদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ জনপ্রতিনিধিদের নাম উঠে আসতে শুরু করেছে। এছাড়া পলাতক রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগের এক নেতা। একই দিন ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এছাড়াও এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।
গোয়েন্দা সুত্র তথ্য এবং এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের কর্মচারী দিপু সিকদার এবং সাইদুল ইসলাম এবং নারীসহ ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। অন্যরা হলেন মো. রবিউল ইসলাম (২৯), মো. আবদুল কুদ্দুস (২৪), মো. গোলাম সরোয়ার (২৮), মো. মিজানুর রহমান (২৪), মো. ফারুক হোসেন (৩০), মো. সিদ্দিকুর রহমান (২৩), সাবিনা আক্তার (২৩), লিজা বেগম (২৪), দিপু সিকদার (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৩), বাবুল হোসেন (৩২) ও শহিদুল ইসলাম (৪০)। এর মধ্যে রুবিনা আক্তারকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নুরুল হাফিজ এ তথ্য নিশ্চিৎ করেন।
অপরদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ৩৫ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইলে উত্তরপত্র, ডিভাইসসহ নানা পরীক্ষার উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
শনিবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিনজনকে আটক করে মোট ৩৬ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে।
এর মধ্যে এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পলাতক দুইজন হলেন সাবেক কলেজ ছাত্রলীগ নেতা রাসেল চৌকিদার ও এক কলেজ ছাত্র গলাচিপা উপজেলা পানপট্টির রিজন মিয়া। এরা প্রত্যক্ষভাবে এই কাজের সাথে জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশের কয়েকটি শাখা আরো নিবিড়ভাবে তদন্ত করবে বলে জানান পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান। পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে প্রার্থীদের কাছ থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে- উত্তরপত্র সরবরাহ, প্রার্থীকে পরীক্ষায় নানা কাজে সহায়তা করার জন্য প্রার্থী কিংবা অভিভাবকদের কাছ থেকে একটি চক্র দেড় থেকে দুই লাখ এবং কোন কোন প্রার্থীর কাছ থেকে উল্লিখিত অর্থের চেয়ে অধিক পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইদুজ্জমান জানান, ২৪ মে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ১৮,৪৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ এবং ৩১ মে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ২২,৩৬৭ জনের মধ্য ৬৫শতাংশ পরীক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, তার স্ত্রী এবার পরীক্ষার্থী ছিল। উত্তরপত্র সরবরাহের জন্য একটি চক্রের সাথে তার এক লাখ টাকার একটি চুক্তি হয়েছে। পরীক্ষার পূর্বে ওই চক্রকে ৫০ হাজার টাকা আগেই দিতে হয়েছে, বাকি টাকা পরে দেয়ার কথা ছিল। এভাবেই পরিচয় গোপন করে একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে পরীক্ষার পাশ করিয়ে দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা অর্থ লোপাটের কাহিনী।
পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এবার আনুমানিক ৩৫ হাজার পরীক্ষার্থীর অংশ নিয়েছে। সেক্ষেত্রে অর্থ লোপাটের চক্রটি বিভিন্ন ভাবে প্রার্থীর কাছ অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে এর সঙ্গে প্রভাবশালীরাও জড়িত রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিৎ করে। ওই সূত্রটি আরও দাবি করে, ক্ষমতাসীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কয়েক পরীক্ষার্থীর সাথে পরীক্ষা নিয়ে আলাপ হয়েছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশের হাতে আটক হওয়া ব্যক্তির মধ্য অনেকেই শিক্ষক, আইনজীবী, মৎস্য, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীসহ বিভিন্ন দপ্তর কিংবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। পুলিশের হাতে আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় বাদী হয়েছেন গোয়েন্দা শাখার পুলিশের এসআই জাকির হোসেন এবং তদন্তকারী অফিসার গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান।