দক্ষিণাঞ্চলের নদী শাসিত জেলার নাম বরগুনা। বাংলাদেশের যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা সংগ্রাম করতে হয় এই জেলার সর্বসাধারণকে। ২০০৭ সালের সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে বরগুনা অন্যতম জেলা। বিভিন্ন দুর্যোগের নদী শাসিত জেলা হিসেবে নদীর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত দিক দিয়ে অন্যতম। বরগুনা জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি পোল্ডারের ৩৭ পয়েন্টে ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
জেলার সাড়ে ৯শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেনসহ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় সাড়ে ৫শ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এ বাঁধ সম্পূর্ণ মেরামত হতে না হতেই সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে নতুন করে আবারও একাধিকস্থানে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বরগুনার পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের তীব্র ভাঙনে বরগুনা সদর উপজেলার ছোট বালিয়াতলী, নলটোনা, লাকুরতলা, ডালভাঙ্গা, আঙ্গারপাড়া, জাঙ্গালিয়া, পাতাকাটা, গুধিঘাটা, গুলিশাখালী, চালিতাতলী, নলী, বেতাগী উপজেলার বলয়বুনিয়া, দেশান্তরকাঠি, ঝোপখালী, পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া, চরলাঠিমারা, রুহিতা, জিনতলা, পদ্মা, বামনা উপজেলার রামনা, শফিপুর, চেচাং, শিংড়াবুনিয়া, বড় তালেশ্বর, আমতলী উপজেলার পশরবুনিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, পূর্বচিলা, তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এবং হুয়ার স্লুইস পয়েন্টগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব এলাকায় তীব্র ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা। স্থানীয়দের অভিযোগ যথা সময় পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের দাবি, যে কোনো সময় ছোটখাটো দুর্যোগ অথবা জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে উপকূলীয় এ জেলার লাখো মানুষ। রয়েছে জীবন হানির শঙ্কাও। তাই ক্ষতিগ্রস্ত এসব বাঁধ দ্রুত মেরামত ও স্থায়ী সুরক্ষার দাবি। তাই আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় ২২টি পোল্ডারে প্রায় সাড়ে ৯শ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৩৭টি পয়েন্টে ১৮ কিলোমিটার বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া বাকি যেসব বাঁধ রয়েছে, তাও পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
জেলার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পায়রা বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ভাঙনে জেলার শত শত ঘর-বাড়ি নদীতে চলে গেছে। হারাতে হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। যার কারণে অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করছে। নদীপাড়ের এসব মানুষকে রক্ষা করতে হলে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বরগুনা সদর উপজেলার ১০ নম্বর নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এ ব্যাপারে জানান, পানি বোর্ডের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ চিহ্নিত করে ইতোমধ্যেই সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যত দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।