বরিশাল নগরীর ২ নং ওয়ার্ডের কাউনিয়ার তারিনী কুমার সড়কটি (জেলে বাড়ি পুল) প্রায় ৭ মাস আগে জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে কয়েক হাজার যানবাহনসহ ট্রাক, লড়ি চলাচল করলেও বর্তমানে সড়কটির সংস্কার করা অংশ অক্ষত আছে। স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দাদের মতে, আগামী কয়েক বছরে সংস্কার করা অংশে হয়তো আর হাত দিতে হবে না। অথচ বিগত মেয়রদের সময় সংস্কার কাজে নিন্মমানের ইটসহ নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এলাকাবাসী এই সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়কটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে লঞ্চঘাট যাতায়াতে বাইপাস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন এই সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ জরুরী ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কার করেছিলেন। সংস্কার কাজে ইট নয় পাথরসহ মান সম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছিল। আর কাজের ধরন দেখে তখনই এখনকার বাসিন্দারা মেয়রের প্রশংসা করেছিলেন। বর্তমানে সড়কটি পূর্বে সংস্কার করা অংশে কিছু খানাখন্দ সৃষ্টি হলেও অক্ষত আছে পাথরসহ মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সংস্কার করা অংশ। আশা করা যাচ্ছে ওই অংশে আগামী কয়েক বছরে হয়তো আর হাত দিতে হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর শুধু এই সড়কটিই নয় বরিশাল নগরীর বেশকিছু সড়ক এরকম জরুরী ভিত্তিতে টেকসই সংস্কার করা হয়। আর সংস্কার কাজেও আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তান।
বিসিসি সূত্রে জানাগেছে, সংস্কার কাজের প্রায় সব করা হয় অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে। এছাড়া পাথরসহ মানসম্পন্ন সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। সংস্কার কাজের পদ্ধতি কেমন জানতে চাইলে বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, মেয়র মহাদয়ের করা নিয়ম অনুযায়ী টেন্ডারে যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পায় তাকে ৫ বছরের শর্ত দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সড়কে কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়-দায়িত্ব ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। এরপর সংস্কার কাজে ব্যবহার করা সামগ্রী হতে হবে উচ্চ মানের। যেমন সংস্কার কাজে ইট নয় পাথর ব্যবহার করতে হবে। মানসম্পন্ন বিটুমিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। কাজের সময় সড়কের তাপমাত্রাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া সংস্কার কাজে বেভার মেশিন, এসপল্ট মিক্সি প¬াট, তিন ধরনের রোলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। সংস্কার কাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর মান যাচাইয়ের কাজ করেন বিসিসির প্রকৌশলীরা। আর গুণগত মানসম্পন্ন কাজ নিশ্চিত করার জন্য সম্পূর্ণ কাজটি সরাসরি তদারকি করেন মেয়র মহদয় নিজেই। ফলে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। আর এর সুফলও ইতিমধ্যে নগরবাসী পেতে শুরু করেছে।
বিসিসি সূত্রে জানাগেছে, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরীর আমতলার বিজয় বিহঙ্গ থেকে শুরু হয়ে জিলা স্কুলের মোড় হয়ে সদর রোড, স্ব রোড, পশালপুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ সদ্য শেষ হয়েছে। আর গত শুক্রবার রাতে নগরীর জেল খানার মোড় থেকে হাসপাাতাল রোড হয়ে বিএম কলেজ রোড থেকে নথল্লাবাদ বাস টামিনাল পর্যন্ত সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আড়াই কিলোমিটারের এই সড়ক আগামী ৭ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। সংস্কার কাজের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
জিলা স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক জানান, বর্তমানে যে ভাবে সড়কে সংস্কার করা হচ্ছে অতিতে এভাবে আর হয়নি। সংস্কার কাজে যেসব উকরন ব্যবহার করা হয় তা দেখে যে কেউ সন্তোষ প্রকাশ করবে। কারণ কাজ চলার সময়ই ব্যবহৃত উপকরণ সমূহ দেখে অনুমান করা যায় কতটা সুপরিকল্পিত ভাবে টেকসই করা হচ্ছে। আর মেয়র মহাদয় নিজেই সরোজমিনে পরিদর্শণ করে কাজের তদারকি করনে। নিসন্দেহে এসব সড়ক টেকসই হবে। বরিশাল নগরীর আমতলা মোড়ের কয়েকজন দোকানদার বলেন, মেয়রের কাজের গতি ও ধরন সর্ম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয়। তাদের সড়কে যে ভাবে কাজ হয়েছে এভাবে বরিশাল নগরীর সব সড়কে কাজ হলে বরিশাল নগরীর সড়ক উন্নয়নে দীর্ঘস্থায়িত্ব পাবে।
বরিশাল নগরীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কয়েকজন নেতা জানান, শুধু উন্নয়ন নয়, নগরবাসী চায় টেকসই উন্নয়ন। কারণ টেকসই উন্নয়ন না হলে শুধু অর্থের অপচয়ই হয়না এতে ভোগান্তিও ডেকে আনতে পারে। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর কাজ দেখে মনে হচ্ছে বরিশাল নগরীকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তার কাজ ইতিমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে প্রশংসার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশাপাশি নগরীর থেকে জলাবদ্ধতা দুরকরণেও তিনি উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে নগরীর জলাবদ্ধাতার কারণ হিসেবে ড্রেনে পলি জমে ভড়াট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি খুজে বের করে তা অপসারনে ব্যবস্থা নেওয়ায় জলাবদ্ধতা কমে এসেছে। এছাড়া নগরীর নানা উন্নয়নে ইতিমধ্যে সুনিয়ন্ত্রীত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
সাংস্কৃতিক নেতারা আরো জানান, টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি সেসব নিয়মিত তদারকি করতে হবে। যেমন সড়কের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ওভার লোড নিয়ে কোন গাড়ি যাতে নগরীতে প্রবশ করতে না পারে। এতে সড়কের স্থায়ীত্ব কমে যায়।
এ বিষয়ে বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, নগরীর সড়কগুলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টন ভার বহনে সক্ষম। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ টন নিয়ে ট্রাক বা লড়ি নগরীতে প্রবেশ করে। এসব ওভার লোডের গাড়ি নগরীতে প্রবেশে মেয়র মহাদয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ইতিমধ্যে মেয়র মহাদয় নিজে এরকম বেশ কিছু গাড়ি আটকে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে উন্নয়ন কাজ শেষ হবার পর তার রক্ষনাবেক্ষনের জন্য মেয়র মহোদয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এজন্য নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে।