নিরাপদ সড়কের দাবিতে এত আন্দোলনের পরও কমছে না দুর্ঘটনা। বরং মৃত্যুর মিছিল আরো দীর্ঘই হচ্ছে প্রতিদিন। সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে একের পর এক তাজা প্রাণ। পঙ্গু হচ্ছেন নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গত চার মাসে বরিশালসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ ৮১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ। নিহতদের কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায়, আবার কেউ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন। অনেকের মরদেহই হাসপাতালে আনা হয়নি।
শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন। পরের মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে ২৬ দিনে মারা গেছেন ১৪ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মার্চ মাসে। এ মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২ জন। এপ্রিল মাসে ২৫ দিনে মারা গেছেন ২১ জন। এছাড়া, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ জনের বেশি মানুষ এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগ মানুষ হাড় ভাঙার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এসএম ইকবাল বলেন, দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে আগে যাওয়ার প্রবণতাই দায়ী। সাধারণ মানুষ, যানবাহনের চালক, এমনকি ট্রাফিক বিভাগই আইন ঠিক মতো মানছেন না।
তিনি বলেন, পুলিশের একার পক্ষে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিকসহ সব মহলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খায়রুল আলম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মামলা দিচ্ছি, নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। ২০১৮ সালে আইন না মানায় মহানগরীতে আমরা ৩৯ হাজারের বেশি মামলা দিয়েছি। এরপরও দুর্ঘটনা কমছে না।
তিনি বলেন, সবাইকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানতে হবে। শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কিত একটি অধ্যায় রাখা হলে ছোটবেলা থেকেই আইনের প্রতি ধারণা ও সম্মান বাড়বে বলে মনে করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।