ঘূর্নিঝড় ফণি মোকাবেলা করাকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম ভুলে তিনি অবিরাম ছুটে চলেছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বৃষ্টিতে ভিজে, নির্ঘূম রাত কাটিয়ে অসহায় মানুষের পাঁশে থেকে তিনি প্রমান করেছেন তিনি সত্যিকার অর্থে নগর পিতা নন তিনি একজন নগর সেবক। ফণী মোকাবেলায় তার নেয়া পদক্ষেপ গুলো ইতোমধ্যে সর্বমহলে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর পরই মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর ভবনে সিটি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা করেন। এর আগে ওই দিন দুপুরে তিনি স্পিড বোর্ড যোগে কীর্তনখোলা তীরবর্তী মানুষদের কাছাকাছি গিয়ে হ্যান্ড মাইকযোগে সর্তকতা মূলক ব্যাপক প্রচারনা চালান। সিটি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগর ভবনে একটি নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হয়।
এছাড়া মেয়রের পরামর্শে সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা নম্বর দিয়ে মনিটরিং সেল খোলা হয়। মেয়রের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরীর সকল ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোতে আক্রান্তদের জন্য ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়। মেয়র সাদিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে বরিশালের ফায়ার সার্ভিসকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী টর্চ লাইট সরবরাহ করেন। আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য স্কুল-কলেজ গুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়। মেয়রের নির্দেশে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ট্রাক, স্কাভেটর, লোডার, স্কিট স্টিয়ার লোডার, ব্যাকহো লোডার রোড লোডারসহ অন্যান্য যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়াও বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হ্যালোজেন লাইট, নিরাপদে আশ্রয় নেয়া লোকজনদের জন্য রাতের খাবার, জেনারেটরের ব্যবস্থা, ড্রিল, অটোমেটিক কার্টার মেশিন ও আধুনিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়। সিটি কর্পোরেশনের প্রায় তিনশত শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। সূত্রমতে, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ শুক্রবার দুপুরে আবহাওয়া পরিস্থিতি খারাপ দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
তিনি ছুটে যান নদী বন্দরসহ নদী তীরবর্তী কলোনী সমূহে। সেখানে অবস্থান করে তিনি সকলের খোঁজ খবর নেন। তিনি সকলকে দূর্যোগের এ সময়ে সকলকে ধৈয্য ধারনের আহবান জানিয়ে বলেন, ফণী মোকাবেলা করা হবে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায়। শুক্রবার রাতে বিসিসির কর্মকর্তা, কর্মচারী, কাউন্সিলর, দলীয় নেতাকর্মিসহ কয়েকশত সেচ্ছাসেবক নিয়ে নির্ঘূম রাত কাটিয়েছেন সিটি মেয়র। নগর ভবনে রাতভর অবস্থান করে আবহাওয়া পরিস্থিতির সার্বক্ষনিক খোজ রেখেছেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর পর বিভিন্ন ঝুকিপূর্ন এলাকায় ছুটে গিয়ে হ্যান্ড মাইক দিয়ে মাইকিং করে সকলকে সর্তক থাকার আহবান জানান নগর সেবক সাদিক আবদুল্লাহ। সূত্র আরো জানায়, বিসিসির ৩০ টি ওয়ার্ডের ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের সকল কাউন্সিলরদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি এলাকা ত্যাগ না করতে নির্দেশন দেন মেয়র। তার নির্দেশনা অনুযায়ী বিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সকল ওয়ার্ডে নিরলস কাজ করছেন যাতে ময়লা আটকে ড্রেন বা রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। বিনিদ্র রাত কাটিয়ে সকালে বিশ্রামে না নিয়েই আবার তিনি বের হন সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিতে।
ফণীর প্রভাবে অতিরিক্ত জলোচ্ছাসের কারনে কীর্তনখোলা নদীর পানি বেড়ে চাঁদমারী শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে এ সংক্রান্ত খবর পেয়ে তিনি তাৎক্ষনিক সেখানে ছুটে গিয়ে করনীয় সর্ম্পকে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। টানা তিনদিনের প্রানপন চেষ্ঠায় মেয়র সাদিক নগরবাসীকে একটা ম্যাসেজ দিয়েছেন যে, তিনি নগরবাসীর জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন।