সুপার সাইক্লোন ফণীর প্রভাবে শুক্রবার রাতে ভা-ারিয়া উপজেলার কঁকিচা নদী লাগোয়া ১৯নং চরখালী সরকারি প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করে নবদম্পতি এবং তাদের সাথে থাকা ৬০ জন বরযাত্রীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অন্তত দুই থেকে আড়াইশ মানুষ।
শনিবার সূর্যোদয়েরর সাথে সাথে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন অবস্থা। এসময় কথা হয় বরের সাথে। বর পিরোজপুর জেলা সদরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুর থেকে একটি বাস ও একটি মাইক্রোকরে প্রায় ৬০জন বর যাত্রী নিয়ে জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী গ্রামের বাদুরা নামক স্থানে বিবাহ সম্পন্ন করে পিরোজপুরে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে যায়। ফেরার পথে চরখালী ফেরি ঘাটে আসলে ফেরি কতৃপক্ষ নদী উত্তাল থাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির কারনে ফেরি ঘাটের অনতি দুরে মঠবাড়িয়া-চরখালী সড়ক সংলগ্ন ১৯নং চরখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারে রাত্রী যাপন করে। তিনি আরো জানান, এসময় তারা ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় আড়াইশ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় গ্রহন করে। খবর পেয়ে ভা-ারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ আশ্রিতাদের মাঝে শুকনা খাবার চিরা,গুর,দিয়াসলাই,মোম বাতি ও পানি বিতরন করেন।
সকালে কচা নদী ও বলেশ্বর নদের মোহনায় একটু উত্তাল দেখা গেছে। পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২ফুট বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে দমুলা,তেলিখালী সাইক্লোন সেল্টারসহ উপজেলার ৫৩টি সাইক্লোন সেল্টার ছাড়াও পৌর শহরের বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দোতালায় স্থানীয় প্রায় শতাধীক নিন্ম আয়ের মানুষ আশ্রয় গ্রহন করে। তাদের মাঝে শুকনা খাবার চিরা, গুড়, দিয়াসলাই, মোম বাতি ও পানি বিতরণ করা হয় বলেও জানান তারা। শনিবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ঝড়ের প্রবলতা কমতে থাকায় এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া মানুষ স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছাতে শুরু করেছে। ঝড়ে ভা-ারিয়া-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের মল্লিক বাড়ির সামনে, উপজেলা পরিষদের সামনে গাছ উপড়ে পড়ার সাথে সাথে তা সড়িয়ে নিয়ে সড়কের যাতায়াত স্বাভাবিক করা হয়। তবে কলা বাগান, পেঁপে, পান বরজসহ মৌসুমী কৃষির অনেকটা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু কোথাও কোন মানুষ বা অন্য কোন প্রাণীর হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন এলাকার প্রবীণ মানুষের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, সিডর, আইলার মত ঝড় মোকাবেলার পর থেকে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের ব্যপক প্রচারনার ফলে মানুষ শতর্ক হওয়ায় বড় কোন দুর্ঘটনায় পড়তে হয় নাই। কারন পূর্বে বেশি ক্ষতি হত সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়া জেলেদের। তারাও প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে এখন শতর্ক হয়ে আবহাওয়ার বিরুপ পূর্ব সংকেত পেলে আর মাছ শিকারে যায়না।
তবে প্রায় ১৮ঘন্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফণী আতঙ্কে স্কুল,কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক/ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বল্প। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুর পাল্লার কোন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ভা-ারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল আলম জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রাথমিক ভাবে ১৬শ কেজি চিরা,২শ কেজি গুর, ১শ বান্ডিল মোম বাতি এবং গ্যামলাইট ব্যক্তিগত ভাবে বিতরন করেছেন। এদিকে ভান্ডরিয়ায় ৫৩টি সহ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রশাসন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২হাজার ৭৩৯সাইক্লোন সেল্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুুত রাখা হয়েছে।