বরিশাল নদীবন্দর ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৫ হাজার সিপিপির (সাইক্লোন প্রিপারেশন প্রোগ্রাম) স্বেচ্ছাসেবক এবং ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় রুটের ছোট লঞ্চের চলাচল। এছাড়া চলছে সচেতনতামূলক মাইকিং।
বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক। সভায় জানানো হয়, বরিশাল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি অফিস আদালত খোলা রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য মজুদ ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখার জন্য বলা হয়েছে।
সভায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের জেলা পর্যায়ের কর্মকমর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৩২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে ১ লাখ ২৫ হাজার লোকের আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
১০ উপজেলার ৮৫টি ইউনিয়নে ১টি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। ২৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বরিশাল সদর হাসপাতাল ও শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের ৪০০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সতর্কীকরণ মাইকিং
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য পাওয়ার সুবিধার্থে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বরিশাল কন্ট্রোল রুম যোগাযোগ নম্বর ০১৭০৫-৪০৬৫০১, ০৪৩১-৬৩৮৬৬, জেলা পুলিশ সুপার বরিশাল এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭৬৯-৬৯৩২০০, ০৪৩১-৬৩৭৮০, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরিশাল এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭৪১-১৯৬৯৩৯, ০৪৩১-৬৩৮৬৩, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরিশাল এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭১২-০২৬৩০৬, ০৪৩১-৬৫০৫৭, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৮৭৮-০০১১১১, ০৪৩১-৬৫২২২, সিভিল সার্জন বরিশাল এর কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭১২-২৮৫৪১০, ০৪৩১-৬৪৯০৯, জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা-০১৭৪১-১৯৬৯৩৯।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় দ্রুত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় বরিশাল নদী বন্দর থেকে স্থানীয় রুটের সব নৌযান চলাচল পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপপরিচালক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় ২৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া যে সব উপজেলায় আমাদের অফিস নেই সেখানে সরকারি লোকজনের মাধ্যমে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।’
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানিয়েছেন, ‘ফণী মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাইক্লোন শেল্টারগুলো। যেখানে অল্প সময় এবং বেশি সময় ধরে লোকজন থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ উপজেলার ইউএনওদের তাৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও।’
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ‘যেহেতু আবহাওয়া বার্তায় জলোচ্ছাস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি এমন দুর্যোগের পর বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়, তাই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও চাপকল নিরাপদে ঢেকে রাখার জন্য গ্রাম পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’