অনলাইন ডেস্ক: গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করে সেই অর্থে গৃহহীন মানুষের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরি করে দেবে সরকার।
আগামী পাঁচ বছরে এ বরাদ্দের তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে দরিদ্রদের এক লাখ ২৫ হাজার নতুন ঘর তৈরি করে দেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কোন কোন শর্তে ঘর দেয়া হবে সে বিষয়ে একটি নির্দেশিকাও তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রতি ছয় মাসে টিআর খাতে ২০০ কোটি টাকা এবং কাবিটা খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। চলতি বছর দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের জন্য ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করা হবে।
তবে প্রথম পর্যায়ে এ বছরের জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় গড়ে প্রায় ১৮৭টি করে ৬৪ জেলায় ১১ হাজার ৪০৬টি নতুন ঘর নির্মাণ হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি ঘরে থাকবে দুটি রুম, একটি করিডোর, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর। দুর্যোগসহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল ‘গ্রাম হবে শহর’। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, কেউ গৃহহীন থাকবে না। আমাদের মন্ত্রণালয়ে টিআর ও কাবিটার বিশেষ বরাদ্দ ছিল। সেই ফান্ড দিয়ে আমরা দুর্যোগসহনীয় ঘর করে দেব।
তিনি বলেন, ‘গরিব অসহায় মানুষ, যাদের জায়গা আছে কিন্তু ঘর নির্মাণের সামর্থ্য নাই কেবল তাদের জন্যই উন্নতমানের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। এছাড়া ঘরগুলো দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিও কমিয়ে আনবে।’
টিআর ও কাবিটা কর্মসূচি নিয়ে অতীতে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যেত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারণে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে এক সভা আহ্বান করি। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেই, টিআর ও কাবিটার বিশেষ বরাদ্দ এখন থেকে বাতিল। বরং এ কর্মসূচির অর্থ দিয়ে আমরা গৃহহীন পরিবারের জন্য টেকসই ও দুর্যোগসহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেব।’
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ এপ্রিল প্রকল্পটির অনুমোদন দেন’- বলেন এনামুর রহমান।
ঘর নির্মাণের বিষয়ে ডিসি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে এলাকায় ঘর হবে ওই এলাকায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় পানির লেভেল হিসাব করে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের বন্যার পানির লেভেলের উপরে থাকবে ঘরের ভিটি। সেটা পাকা হবে, আরসিসি পিলার ও ইটের দেয়ালে হবে ঘরগুলো। ফলে বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষকে ঘর ছেড়ে যেতে হবে না।’
এনামুর রহমান বলেন, আগামী পাঁচ বছরে মোট এক লাখ ২৫ হাজার ঘর করে দেব। প্রতি বছর টিআর ও কাবিটার স্পেশাল বরাদ্দের যে বাজেট হয় তা প্রতি ছয় মাসে ৩০০ কোটি টাকা। তবে পাঁচ বছরে মোট তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা এক লাখ ২৫ হাজার ঘর তৈরি করে দিতে পারব।
প্রথম পর্বে ১১ হাজার ৬০৪টি ঘর নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
কী কী শর্তে ঘর দেয়া হবে, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্য আমরা একটি নির্দেশিকা করেছি। ওই নির্দেশিকা অনুসরণ করে ডিসিসহ সংশ্লিষ্টরা সুবিধাভোগীদের নির্বাচন করবেন। কারও হয়তো এক বা দুই শতাংশ জায়গা আছে কিন্তু ঘর নেই বা ঘর আছে কিন্তু তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের আমরা ঘর করে দেব।’
‘এছাড়া যে পরিবারে পুরুষ সদস্য নেই বা পুরুষ সদস্য আছে কিন্তু তার বয়স ৬৫ বছরের উপরে, নদীভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে; এছাড়া বেদে ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের জন্য এ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।’
‘প্রতিটি ঘর হবে গ্রামের মানুষদের জীবন বদলের প্রতীক’ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তাদের জীবনমানকে যেমন উন্নত করবে, তেমনি আমাদের নির্বাচনী স্লোগান ‘গ্রাম হবে শহর’- এ ধারণাটাও বাস্তবে রূপ পাবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের পরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, টিআর-এর বিশেষ বরাদ্দের প্রায় ২০০ কোটি টাকায় সাত হাজার ৭৩৬টি ঘর নির্মাণ হবে। কাবিটার বিশেষ বরাদ্দের প্রায় ১০০ কোটি টাকায় তিন হাজার ৮৬৮টি ঘর নির্মাণ সম্ভব। এগুলো আগামী জুনের মধ্যে নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রথম পর্বে কোন জেলায় কয়টি ঘর
টিআর-এর বিশেষ বরাদ্দের আওতায় দরিদ্রদের জন্য রাঙ্গামাটিতে ১৭১, চাঁদপুরে ১৯২, গোপালগঞ্জে ১৯৩, সিরাজগঞ্জে ২০০, মানিকগঞ্জে ২০১, খুলনায় ২০২, বাগেরহাটে ২০৩, মেহেরপুরে ২০৬, চুয়াডাঙ্গায় ২০৯, নওগাঁয় ২১১, পিরোজপুরে ২১১, নীলফামারীতে ২১২, লক্ষ্মীপুরে ২১৩, পাবনায় ২১৬, রাজবাড়ীতে ২২২, নেত্রকোনায় ২২৩, পটুয়াখালীতে ২৪৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬০, শেরপুরে ২৭১, লালমনিরহাটে ২৭৫, রংপুরে ২৮৭, গাইবান্ধায় ৩০৬, জামালপুরে ৩৪৪, খাগড়াছড়িতে ৩৪৬, কিশোরগঞ্জে ৩৫১, মাগুরায় ৩৭২, বান্দরবানে ৪১৫, দিনাজপুরে ৪২২, কুড়িগ্রামে ৪৬৫টি ঘর নির্মাণ হবে।
ঢাকার সাভারে বেদে ও তৃতীয় লিঙ্গ সদস্যদের জন্য ৫০টি এবং শরীয়তপুরের নড়িয়ায় নদীভাঙন এলাকায় ৪৩টি ঘর নির্মাণ হবে।
কাবিটার বরাদ্দের অর্থে নারায়ণগঞ্জে ১৭, মুন্সীগঞ্জে ২০, মাদারীপুরে ২৪, গাজীপুরে ৪৫, ফরিদপুরে ৫০, ফেনীতে ৫৩, ঢাকায় ৬৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬৭, নরসিংদীতে ৬৮, মৌলভীবাজারে ৭২, সিলেটে ৮৫, হবিগঞ্জে ৮৮, কুমিল্লায় ৮৮, চট্টগ্রামে ৮৯, ভোলায় ১০১, শরীয়তপুরে ১০৩, কক্সবাজারে ১০৯, নড়াইলে ১১০, কুষ্টিয়ায় ১১৪, সাতক্ষীরায় ১২২, টাঙ্গাইলে ১২৪, রাজশাহীতে ১৩২, জয়পুরহাটে ১৪০, ঝালকাঠিতে ১৪১, ময়মনসিংহে ১৪৪, নোয়াখালীতে ১৫৩, ঠাঁকুরগায়ে ১৫৩, নাটোরে ১৫৭, বরগুনায় ১৬৮, সুনামগঞ্জে ১৭০ পঞ্চগড়ে ১৭২, ঝিনাইদহে ১৭৪, যশোরে ১৭৬, বগুড়ায় ১৭৮, বরিশালে ১৮০ ও রাঙ্গামাটিতে ১৬টি ঘর নির্মাণ করে দেবে সরকার।’