মাগরিবের নামাজ শেষ হতে না হতেই মুসল্লিরা মসজিদে আসতে শুরু করেন। রাত ৮টার দিকে এশার আজান পড়তে পড়তে প্রায় পূর্ণ হয়ে যায় রাজধানীর মসজিদগুলো। আর সাড়ে আটটার দিকে এশার জামাতের সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মসজিদগুলো। মসজিদের ছাদেও মুসল্লিদের এশার জামাতে শামিল হতে দেখা গেছে।
রোববার শবে বরাতের রাতে এমনই ছিল রাজধানীর মসজিদগুলো। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা গুরুত্বপূর্ণ এই রাতের বরকতের অংশীদার হতে মসজিদগুলোতে এভাবেই ভিড় জমিয়ে থাকেন।
পবিত্র লাইলাতুল বরাত উদযাপনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। বাদ মাগরিব থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে কুরআন তেলওয়াত, হামদ-না’ত, ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ, কিয়াম, জিকির, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত।
‘ভাগ্য রজনী’ হিসেবে পরিচিত শবে বরাতের পুণ্যময় রাতটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা নফল নামাজ, জিকির, কোরআন তেলওয়াতসহ ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহ মাফ চান। মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাত এবং দেশ ও নিজের উন্নতি কামনা করে এই রাতে মোনাজাত করে থাকেন মুসলমানরা।
রাত সাড়ে ৭টার দিকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে গিয়ে দেখা গেছে, ‘শবে বরাতের ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করেছেন তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আযহারী। নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও ওই সময়ই মসজিদে প্রচুর সংখ্যক মুসল্লি ছিলেন। দু’টি প্রধান গেইট দিয়ে বিপুল সংখ্যক মুসল্লিরা প্রবেশ করছিলেন।
এরপর রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গায়ই মুসল্লিদের ভিড়। পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়ে বড়দের সঙ্গে উৎসাহ নিয়ে অনেক শিশুদেরও মসজিদে আসতে দেখা গেছে
সোয়া আটটা থেকে পৌঁনে ৯টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ীর উত্তর রায়েরবাগের বাইতুত তাকওয়া জামে মসজিদ, খানবাড়ি চৌরাস্তা এলাকায় খান বাড়ি বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, মুসলিমাবাদ বাগানবাড়ি এলাকায় বাগানবাড়ি জামে মসজিদ ও মাতুয়াইল কবরস্থান এলাকায় চাঁনবানু জামে মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে মসজিদগুলো কানায় কানায় পূর্ণ।
চাঁনবানু জামে মসজিদের মুসল্লি সৌরভ শাহরিয়ার বলেন, ‘আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। সেভাবেই এশার পড়তে এসেছি। আজকে সঙ্গে বাড়তি পাওয়া হচ্ছে শবে বরাতের মর্যাদাপূর্ণ রাত।’
এই মসজিদগুলোতে শিশুদেরও ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়েছে। এশারের নামাজের পর মসজিদের ইমামরা লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাদের ফজিলত ও আমলের বিষয়ে বয়ান করছেন। চারদিকের মসজিদের মাইকগুলো থেকে বয়ানের শব্দ ভেসে আসছে।
মসজিদগুলো সারারাতই খোলা থাকবে মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য। অনেকেই নামাজ, কুরআন তেলওয়াতের পাশাপাশি কবর জিয়াতরের জন্য কবরস্থানে ছুটে যাবেন। আল্লাহর কাছে মৃত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফেরাতের কামনা করবেন।
বায়তুল মোকাররমে রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিট থেকে ‘শবে বরাতের ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করেছেন তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আযহারী। এশারের পর রাত ৯টা ৫মিনিট থেকে ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম।
এ ছাড়া রাত ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘শবে বরাত ও রমজানের তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা এহসানুল হক জিলানী। রাত ১টা ৫৫ মিনিট থেকে ‘তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সবশেষে বায়তুল মোকাররমে ফজরের নামাজের পর আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।