অনলাইন ডেস্ক : তীব্র গরমে বরিশাল অঞ্চলের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই গরমের এই তীব্রতার কারণে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। গত সাতদিনে ডায়রিয়া রোগে সাড়ে ৫শ’ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলো আইভি (শিরায় দেওয়া) স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের বেড সীমিত হওয়ার কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এই রোগীদের ৫০ ভাগই শিশু বলে জানিয়েছে চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার সকালে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র প্রতীয়মাণ হয়েছে। একই অবস্থা বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতেও।
এক্ষেত্রে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ এম আর তালুকদার মুজিবের ভাষ্য হচ্ছে- কয়েক দিনের তীব্র গরমে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এর সঙ্গে গরমে ঘেমে একধরনের অ্যাজমা ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত শিশুরাও রয়েছে। গরমে শুধু শিশুরা নয়, সকলেরই উচিত বেশি বেশি পানি পান করা। পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়া। বিশেষ করে ছোট শিশুদের রোদে বাইরে বের হতে না দেওয়াই ভালো বলে মনে করেন তিনি।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- গত ১১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত দুটি হাসপাতালে শিশুসহ সাড়ে ৫শ’ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এখনও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে দুটি হাসপাতালে ৮০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত ৪১ রোগীকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একই দিনে শেবাচিমের ডায়রিয়া শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৫ শিশু।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ ডায়রিয়া আক্রান্তদের আইভি (শিরায় দেওয়া) স্যালাইন হাসপাতাল থেকে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা দিচ্ছে না। ফলে বাইরে ফার্মেসি থেকে নিজেদের অর্থে কিনে আনতে হচ্ছে।’
অবশ্য এই অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. দেলোয়ার হোসেন বলছেন, প্রতিদিন গড়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৪০ রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই চাপ ক্রমশই বাড়ছে। ফলে রোগীদের পর্যাপ্ত আইভি স্যালাইন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বছরের শুরুতে এক লাখ স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠালে বরাদ্দ দিয়েছে মাত্র ১৫শ’।
তবে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলছেন, আইভি স্যালাইন সঙ্কট নেই। প্রয়োজনের তুলনায় কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার থেকে এই স্যালাইন সরবরাহ কিছুটা কম রয়েছে। যে কারণে হাসপাতালের রোগীদেরও বাইরে থেকে আইভি স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। তবে রোগী বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শুক্রবার থেকে সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন- ‘পহেলা বৈশাখের পর থেকে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাইরের রোদে ঘোরাঘুরি ও খাওয়ার কারণে অনেকে ডায়ারিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া গরমের তীব্রতার কারণে ঘাম শরীরের মধ্যে বসে গিয়ে শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই তাপমাত্রা না কমলে আরও মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন।
এমন পরিস্থিতিতে বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক প্রনব কুমার রায়ের ভাষ্য হচ্ছে- বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই। বরং এই তাপমাত্রা ২/১ দিনের মধ্যে বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। বৃহস্পতিবার বেলা একটায় ৩৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বরিশাল অঞ্চলে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।’