অনলাইন ডেস্ক// বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে বেশ জোরে শোরে আলোচনা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই আলোচনার জোয়ারে ভাটা পড়ে। তবে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা উন্নতির সাথে সাথে আবারো সম্মেলন নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় উঠছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ঘুরে ফিরে ভাসছে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার নাম।
আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি জনসাধারণেরও আগ্রহের শেষ নেই। কারণ এই দলের এক সময়ের নেতৃত্বে ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এই দলের হাত ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে আর বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে আগ্রহের মাত্রাটা কিছুটা বেশি। কারণ দলের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন, আবার কারা কারা দলীয় পদ থেকে ছিটকে পড়ছেন তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তবে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় দলের সাধারণ সম্পাদক কি বহাল থাকছেন নাকি ওই পদে নতুন কেউ আসছে? যদিও বিষয়টি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার মতামতের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকসাধীন রয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তার শারিরীক অবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১০/১২ দিনের মধ্যে তার হার্টের বাইপাস সার্জারি করা হবে। ডাক্তাররা তাকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে চিৎসকরা জানিয়েছেন, বাইপাসের পর ওবায়দুল কাদের সুস্থ হলেও তাকে একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। আগের মতো আর সক্রিয় থাকতে পারবেন না। কাজ কমিয়ে ফেলতে হবে। সেক্ষেত্রে দলীয় দায়িত্ব ছেড়ে তিনি শুধু মন্ত্রীত্ব পালন করতে পারেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ফলে আগামী অক্টোবরেই হতে পারে ২১তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদাধিকার বলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন মাহবুব-উল আলম হানিফ। আর গত বছর ওবায়দুল কাদের ভারত সফর কালীন সময়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় এসেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আগেও তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আব্দুর রাজ্জাক দলের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় তার নাম আকস্মিকভাবে সামনে চলে আসছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামও শোনা যাচ্ছে। রহমান ও নানক গত নির্বাচনের দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে বিভিন্ন সমীকরণে সাধারণ সম্পদকের দৌড়ে তারাও এগিয়ে আছেন। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নামও শোনা কারো কারো মুখে শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, যেসব জেলা উপজেলা কাউন্সিল শেষ হয়নি, সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো শেষ হওয়ার পর পরে সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হবে। তবে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। কে সাধারণ সম্পাদক হবেন সেটা তাদের ভোটে নির্বাচিত হবে। সুতরাং এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার কিছু নেই।
আওয়ামী লীগের একাধিক নির্ভযোগ্যসূত্র নিশ্চিত করেছেন, আসন্ন সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পুনর্নিবাচিত হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত ছিল। তবে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হওয়ায় স্বাস্থ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে কে বসছেন সেটা জানার জন্য সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
-বাংলাদেশ জার্নাল