আজ ১৭ই মার্চ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালি জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তত্কালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন আজীবন সংগ্রামী। তার যখন জন্ম হয় তখন ছিল বৃটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। একাত্তরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নজীরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ই মার্চ তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’র নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তার প্রথম বিচার শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
কর্মসূচি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অসংখ্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে যাবেন টুঙ্গিপাড়ায়। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার মাজারে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী সেখানে আয়োজিত শিশু সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, পুরস্কার বিতরণ এবং বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। সেখানকার অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, বঙ্গবন্ধুকে লেখা শ্রেষ্ঠ চিঠি পাঠ, সেলাই মেশিন বিতরণ, ‘আমার কথা শোন’ শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন ইত্যাদি। এছাড়া আগামীকাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। দেশ ও জনগণের কল্যাণ ও অধিকার আদায়ে জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। তিনি জানতেন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য : ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙিন’। তিনি বলেন, শিশুদের জীবনকে রঙিন করে গড়ে তুলতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্যই ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমরা আমাদের বর্তমানকে উত্সর্গ করি। সবাই মিলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মৃত্যুঞ্জয়ী: জেপি
জাতির পিতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালবাসা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই মহামানবের নেতৃত্বে সুদীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কায়েম হয়েছে। আমরা এই মহান নেতার ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে জানাই বিনম্র ভালবাসা ও গভীরতম শ্রদ্ধা।
জেপি’র কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধুর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টি (জেপি) বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় জাতীয় পার্টি-জেপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো এবং টুঙ্গিপাড়ায় তার মাজারে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।
অন্যান্য কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা, উপজেলা সদরে আনন্দ র্যালি, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় এ উপলক্ষে পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা প্রদান
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সব সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বহির্বিভাগে সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিত্সা প্রদান করা হবে।
সারাদেশে দোয়া মাহফিল
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ সারাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় কুরআনখানি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।