দেশে প্রথমবারের মতো বসছে ব্যালাস্টবিহীন রেললাইন। একইসঙ্গে এলিভেটেড রেললাইন নির্মাণও প্রথম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা-যশোর যে রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে, এটি হবে দেশের প্রথম ব্যালাস্টবিহীন এলিভেটেড রেললাইন। এতে বুলেট ট্রেন চলতে পারবে। একবার এই রেলপথ নির্মাণের পর পরবর্তী ৬০ বছর আর কোনো মেরামতের প্রয়োজন পড়ে না।
‘পদ্মা সেতু রেললিঙ্ক প্রকল্প’ নামে এই রেলপথ ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ। গত বুধবার এই রেলপথ নির্মাণ ঘুরে দেখেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় ব্যালাস্টবিহীন রেলপথ নির্মাণযজ্ঞ দেখানো হয় তাকে। ইস্পাতের বদলে সিমেন্টের ব্যবহারের মাধ্যমে আলাদাভাবে রেললাইন নির্মাণ করে যন্ত্রের মাধ্যমে বসিয়ে দেওয়াকে ব্যালাস্টবিহীন পদ্ধতি বলা হচ্ছে।
জানা যায়, রেলপথটি ঢাকা থেকে বের হয়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর এই আট জেলার ভেতর দিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের প্রায় ২২ কিলোমিটার হবে মাটির ওপর দিয়ে। অর্থাৎ সেতুর মতো এলিভেটেড আকারে।
এলিভেটেড ভায়াডাক্টের ওপর দুটি প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন, দুটি লুপ লাইনসহ রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও লিফট স্থাপন করা হবে। প্রায় ১১ মিটার উঁচু রেললাইনের নিচে দিয়ে সড়কের জন্য আন্ডারপাস থাকবে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন এই রেললাইনে স্টেশন থাকবে ১৪টি।
এগুলো হলো— কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা, নাগরকান্দা, মোকসেদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, পদ্মাবিলা ও জামদিয়া । দুই তলা ট্রেন এই রেলপথে চলতে পারবে। রেলপথটির প্রথম সেকশন কমলাপুর থেকে গেন্ডারিয়া হবে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন, দ্বিতীয় সেকশন হবে গেন্ডারিয়া থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ব্রডগেজ, যেখানে চারটি স্টেশন থাকবে।
তৃতীয় সেকশন হবে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা জংশন সিঙ্গেল ব্রডগেজ লাইন ৪২ কিলোমিটার, যেখানে পাঁচটি স্টেশন, চতুর্থ সেকশন হবে ভাঙ্গা থেকে রুপদিয়া এবং পদ্মাবিলা হয়ে সিংগিয়া স্টেশন ৮৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল ব্রডগেজ লাইন। যেখানে ১০টি স্টেশন পড়বে। এই রেলপথ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নতুন রেলকোচ কেনা। প্রকল্পের টাকায় ১০০টি ব্রডগেজ ট্রেন কেনা হবে। যার চারটি কোচ হবে এসি স্লিপার, ১৬টি এসি চেয়ার, ৫২টি শোভন চেয়ার, ১৮টি শোভন চেয়ার এবং ১০টি অন্য কোচ।
দেশের যোগাযোগ খাতে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৮ হাজার কোটি ও চীন জি-টু-জি ভিত্তিতে ২১ হাজার কোটি টাকা অর্থ সহযোগিতা দিচ্ছে।
রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ জমি পরিদর্শন শেষে জানান, পদ্মা সেতু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যখন খুলে দেওয়া হবে, তখন একইসঙ্গে রেলপথও উন্মুক্ত হবে। ২০২২ সাল প্রকল্প শেষ হওয়ার মেয়াদ থাকলেও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে মাওয়া এবং ভাঙ্গা থেকে জাজিরা রেলপথ নির্মাণ শেষের তাগিদ দেন মন্ত্রী।
পরিদর্শনে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন রেলওয়ের মহাপরিচালক রফিকুল আলম, পদ্মা রেললিঙ্ক প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম ফকরুদ্দীন, রেলের আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সিজ অ্যান্ড পার্টনার্স’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাজ আহমেদ শাহরিয়ার, আবুল হাসনাত ও অ্যাপলো শাহ।