প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে কাদের কাদের বলে ডাকতেই চোখের পাতা নড়ে উঠলো ওবায়দুল কাদেরের। উপস্থিত সবাই কয়েক সেকেন্ডের জন্য হতবাক ও বিস্মিত হয়ে রইলেন। আইসিইউর ভেন্টিলেশন সাপোর্টে থাকা যে ব্যক্তিটি সকাল থেকে মৃতপ্রায়, সে লোকটি কিনা প্রধানমন্ত্রীর ডাকে চোখের পাতা নাড়ালেন, এটা কি ভ্রম নাকি কাকতলীয়ভাবে নেত্রীর ডাকে সাড়া দেয়া। এরপর নেত্রী আরও দু-একবার ডাকলেন কিন্তু আর কোনো সাড়া নেই তার।
রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে আসেন। এ সময় কাদেরের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজখবর নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজির অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘মিরাকল কিনা জানি না, উপস্থিত সবাই দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাদের কাদের ডাকার পর দু-তিন সেকেন্ডের জন্য ওবায়দুল কাদেরের চোখের পাতা নড়ে ওঠে।’
ডা. জামানের কাছে ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফ করবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন চিকিৎসক জানান, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন। উচ্চমাত্রার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও মারাত্মক ধরনের হার্ট অ্যাটাকের কারণে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রমেই অকার্যকর হয়ে পড়ছে। আগে কিডনিতে সমস্যা না থাকলেও এখন কিডনিও বিকল হয়ে পড়ছে। সার্বিকভাবে তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। একই বক্তব্য আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছেন হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যানও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সন্ধ্যা ৭টায় আসার কথা রয়েছে। সকালেই সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে হৃদরোগসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স আসবেন। তারা এসে রোগীর অবস্থা পর্যালোচনা করবেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওবায়দুল কাদেরকে এ মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নেয়া সম্ভব না।
একজন চিকিৎসক বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন জেনেও ভালোবাসার টানে তাকে একনজর দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসছেন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী, এমপি, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনীতিবিদ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে ইনফেকশনের ঝুঁকি মারাত্মক। ওবায়দুল কাদেরের ক্ষেত্রে রোগের পাশাপাশি সংক্রমণের ঝুঁকিও মারাত্মক হয়ে উঠছে বলে ওই চিকিৎসকরা জানান।
এর আগে সকালে বুকে ব্যথা অনুভূত হলে দ্রুত ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন তিনি।
সকাল থেকেই তাকে দেখতে হাসপাতালের ডি-ব্লকের সামনে ভিড় করেন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।