অনলাইন ডেস্ক// মেয়ের হত্যার বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হতদরিদ্র পিতা-মাতা। বরিশালের মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামের সোহরাব ভুইয়া ও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়ার আশায় থানা পুলিশ, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিসহ বিভিন্ন জনের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মেয়ে হারানো পিতা-মাতা আইনি সহায়তা পাওয়ার আশায় বিভিন্ন জনের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কহিনুর বেগম জানান প্রায় ৫ বছর আগে তাদের বড় মেয়ে সাবিনা আক্তারের সাথে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রতনপুর গ্রামের মানিক হাওলাদারের ছেলে রিয়াজ হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রিয়াজ ও তার পরিবার যৌতুকের জন্য সাবিনাকে প্রথমে চাপ প্রয়োগ করে পরবর্তীতের নির্যাতন চালায়। মেয়ের ওপর নির্যাতন বন্ধে হতদরিদ্র পিতা-মাতা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে যৌতুকের টাকা দেয়। কিছুদিন পরে যৌতুক লোভী রিয়াজ হাওলাদার ও তার পরিবার সাবিনা আক্তারকে যৌতুকের জন্য পুনঃরায় মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ওই ঘটনায় কহিনুর বেগম তার মেয়েকে নিয়ে মুলাদী উপজেলা ব্রাক অফিসের আইনি সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ দায়ের করলে রিয়াজের চাচা ভাসানচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাদশা হাওলাদার তাদের ভুল স্বীকার করে সাবিনাকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়। সাবিনাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ৮/১০দিন পরে ১৩/১১/২০১৮ তারিখে রিয়াজ হাওলাদারকে পাশ্ববর্তী প্রবাসী কাওসার হাওলাদারের স্ত্রী তানজিলার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে সাবিনা প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে কথার কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রিয়াজ হাওলাদার ক্ষিপ্ত হয়ে সাবিনার তলপেলে লাথি দিলে অন্তঃসত্ত্বা সাবিনা মাটিতে পড়ে যায়। নিজেদের রক্ষা করতে রিয়াজ তাৎক্ষণিক সাবিনার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায়। সংবাদ পেয়ে কাজিরহাট থানা পুলিশ সাবিনার লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে এবং একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।
ওই ঘটনায় সাবিনার পিতা সোহরাব ভুইয়া বাদী হয়ে রিয়াজ হাওলাদারসহ ৫জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করতে গেলে কাজিরহাট থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় এবং ময়নাতদন্তের পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। ঘটনার পর পুলিশ রিয়াজ হাওলাদার ও তার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ গ্রহণ করে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টের বিষয়ে জানতে গেলে পুলিশ সোহরাব ভুঁইয়া ও কহিনুর বেগমের সাথে রূঢ় আচরণ করে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজিরহাট থানার এসআই সুকান্ত বাবু জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার বিষয়টি সামনে আসলে সাবিনা আক্তারের স্বামী রিয়াজ হাওলাদারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ গঠন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।