১০ বছর নয়, মাত্র ১০ মাসেই এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবায়েত ওয়াদুদ গল্প’ হয়ে গেলেন গল্পের গল্প। পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন রোববার বাংলা দ্বিতীয় পত্রে পরীক্ষা বর্জন করল ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র রুবাইয়াত ওয়াদুদ গল্প। গত বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবসে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রাঙ্কনসহ সাহিত্য বিষয়ক প্রতিযোগিতায় সঠিক বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে শনিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন ওই উপজেলার ইউএনও আব্দুস কুদ্দূসের নির্দেশে কক্ষ পরির্দশক শিক্ষার্থী গল্পের উত্তরপত্র নিয়ে আটকে রাখে, এমন অভিযোগ তুলেই পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়।
রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পাশপাশি অভিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দূসের বিচার দাবি করেন গল্প ও তার পরিবার। একইভাবে জেলা প্রশাসক বরাবরও লিখিত অভিযোগ দেন পরীক্ষার্থী গল্প ও তার পিতা শেখ ফরিদ, মা হুমায়ারা সুরভী।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে প্রমাণ হিসেবে ইউএনও বোরহানউদ্দিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের কয়েকটি ফটোকপি তুলে ধরা হয়। তাতে গল্পের স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও লেখেন গল্প যে কার আত্মীয় এবং কেন যে সে এই স্ট্যাটাস দিয়েছে তার কারণ কিছুক্ষণ আগে মাত্র অবগত হলাম। অসুবিধা নেই, এগিয়ে যাও, পারবে। শেষে লিখেন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আজ থেকে ১০ বছর পরে একটা গল্প লিখব। গল্পের নাম হবে ’গল্পের গল্প’।
আরেক স্ট্যাটাসে দেখা গেছে- ইউএনও উপজেলা প্রশাসনের স্কুলের শিক্ষার্থীরা মেধাবী ও সেরা বলে উল্লেখ করে তাদের পুরস্কার পাওয়া সঠিক বলে দাবি করেন।
তবে রোববার ইউএনও আব্দুস কুদদূস সাংবাদিকদের জানান, তিনি পরীক্ষার্থী গল্পকে চিনতেন না। ওই উপজেলায় ৪টি কেন্দ্রে ৪ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। কেউ দেখাদেখি করলে কক্ষ পরিদর্শককে খাতা কিছু সময়ের জন্য আটকে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আগ থেকেই। এ নির্দেশ সবার জন্য প্রযোজ্য।
তবে তিনি স্বীকার করেন- গত বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম উৎসবের প্রতিযোগিতার বিচার নিয়ে ওই ছেলে ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করেছিল। ওই সময় তিনি ওই ছেলে ও তার অভিভাবকদের এসে দেখা করার জন্য লিখেছিলেন। তারা দেখা করেননি। পরে ওই ছেলের পরিচয় পেয়ে ইউএনও গল্পের গল্প লেখার বিষয় উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেয়ার বিষয়ও স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন ওই স্ট্যাটাসের সঙ্গে পরীক্ষার হলের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই ছেলে কেন পরীক্ষা বর্জন করেছে তাও তিনি বুঝতে পারছেন না।
এদিকে ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করে দেখছেন বলে জানান।
অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনে গল্প জানায়- সে কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার রোল ১২২৩১১। দশম শ্রেণিতে তার ক্লাস রোল ছিল এক। সে বরাবর স্কুলে পরীক্ষা ভালো করার পাশপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও অর্জন করে আসছিল।
এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন গল্প বোরহানউদ্দিন আব্দুর জব্বার কলেজ কেন্দ্রে পুরাতন ভবনের ১নং কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিল। ৩০ মিনেটের এমসিকিউ পরীক্ষার ১০ মিনিট যেতেই ইউএনও ওই কক্ষে প্রবেশ করেন। এর পরেই কক্ষ পরিদর্শক তার খাতাটি নিয়ে যান। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে ফেরত দেন।
এ অবস্থায় বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় তার জিপিএ-৫ পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমনকি ইউএনওর আক্রোশে তার পরবর্তী পরীক্ষাও ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হবে। এসব কথা বিবেচনা করেই শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় গল্প।
গল্পের পিতা শেখ ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর কারণে তার ছেলের ভবিষ্যত নষ্ট হলো। তিনি বিচার দাবি করেন।
মা হুমায়ারা সুরভী ছেলের পরীক্ষা বর্জনের বিষয় তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার স্বপ্নের কথা তুলে ধুরে জানান, তাদের কত আশা ছিল। সব ভেস্তে গেছে। পরীক্ষার প্রথম দিন খাতা আটকে রাখার জন্য ছেলে ভীষণ ভয় পায়। গল্প আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এদিকে এমন ঘটনা জেলায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি করেছে। রোববার দিনভর জেলাব্যাপী আলোচনার বিষয় ওয়ে ওঠে।
এদিকে ইউএরওর এমন ঘটনায় বোরহানউদ্দিনের টবগী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। এ সময় তারা ইউএনওর বিচার দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছে।”