সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পর ১০০তম দিন শেষ হয়েছে ৩০ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন মেয়রের নেয়া নানামুখি পদক্ষেপের কারণে বদলে যেতে শুরু করেছে নগর ভবনের অভ্যন্তরীন চিত্র। অনৈতিক কর্মকান্ড পরিহার করে বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে মনোনিবেশ করতে শুরু করায় বিসিসির সার্বিক সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিতকরন কাজ।
নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কর্ম পরিষদের সময়ে সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি দুইজনসহ মোট ১৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসনিক শাখায় ন্যস্ত করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহত দেয়ার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ওই বছরের ২২ অক্টোবর তিনি শপথ গ্রহন করে ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহনের পর মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করতে তিনি কাজ করে যাবেন। এলক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহন করেছেন।
নগর ভবনের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কর্মপরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে নানা অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে। এরমধ্যে গতকাল পানি সরবরাহ শাখার উচ্চমান সহকারি আরাফাত হোসেন মনির ও একই শাখার অপর উচ্চমান সহকারি আবু বকর সিদ্দিককে তাদের চলতি দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে বিসিসি’র বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসমা বেগম রুমী, হাট-বাজার শাখার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারি জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, মাহাবুব আলম, সহকারি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন, ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান শাহীন, পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক মাহাবুব তালুকদার ও চালক শংকর চন্দ্র বনিককে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করে তাদের সকলকে প্রশাসনিক শাখায় ন্যস্ত করা হয়। ওই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন প্রশাসনিক শাখায় হাজিরা প্রদান করছেন।
অপরদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। কখন কাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এ ভাবনায় দিন কাটছে অনেকের।
সূত্রমতে, দায়িত্বগ্রহণের পরই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন। ফলে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরেছেন চরম বেকায়দায়। আগে যেকোন কাজের বিনিময়ে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহন ছিল প্রকাশ্যে। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পর ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আর ফাইল আটকে রেখে গ্রাহকদের হয়রানি করার ব্যাপারে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীই সাহস দেখান না।
একাধিক গ্রাহকরা বলেন, নগর ভবনে গিয়ে এখন বিনা উৎকোচে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায়। অবস্থা এমন হয়েছে এখন বিসিসির কোন স্টাফকে খুশী হয়ে টাকা-পয়সা দিতে চাইলেও তারা তা গ্রহনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এসব স্টাফদের অনেকেই আগে অফিস খরচার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, এখন সকলের মাঝে একটা শৃঙ্খলাভাব দেখা যাচ্ছে। আগে যারা নিয়মিত অফিসে না এসে এক সপ্তাহের হাজিরা খাতায় একদিনে স্বাক্ষর করতেন এখন তারাই সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে প্রবেশ করেন এবং মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নেন।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কর্পোরেশনের দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। পরবর্তীতে তিনি সকল কর্মচারীর বেতন দেয়ার জন্য নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট খোলার নির্দেশ দেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথমে সকলের বেতন পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে এখন পূর্বের ন্যায় কেউ নামে বেনামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।