পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূর দিয়ে বয়ে গেছে ‘মাদারবুনিয়া’ খাল। এই খালের এপারে রসুলবাড়িয়া, ওপারে মাদারবুনিয়া গ্রাম। মাদারবুনিয়ায় নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সে কারণে এই খাল পেরিয়ে প্রতিদিন রসুলবাড়িয়ার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় কোমলমতিদের।
অথচ সেই খাল পারাপারে নেই কোনো সেতু। একমাত্র ভরসা ছোট্ট ডিঙি নৌকা। সেই নৌকায়ও নেই কোনো মাঝি যে শিশুদের ওপারে পৌঁছে দেবে বা ফিরিয়ে আনবে।
এতে শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রশি টেনে পারাপার হতে হয় প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার। রশি টানতে গিয়ে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা।
কখনো রশি পেঁচিয়ে বই-পুস্তক নিয়ে খালে পড়ে যায় শিক্ষার্থীরা, কখনও শিক্ষার্থীসহ নৌকাই ডুবে যায়।
এভাবে ওই খালে ডুবে তিন শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এমন পরিস্থিতিতে ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন মাদারবুনিয়া গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নৌকার ওপর নির্ভর করে স্কুলে আসা-যাওয়া করে।
এরমধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু নৌকায় রশি টেনে পারাপারে ঝুঁকি থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
অভিভাবকরা আতঙ্কের কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
প্রতিদিনই খুব কষ্ট ও আতঙ্ক নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয় জানিয়ে রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মানছুরা আক্তার বলে, ‘রশি টানতে যাইয়া খালে পইরা গেছি কয়েকবার। বই-পুস্তক ভিজ্যা যায়। সরকার আমাগোরে একটা পোল দিলে ভাল ওয়।
স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, শুধু শিক্ষার্থী নয়, এ দুর্ভোগ পুরো এলাকাবাসীর।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচন এলেই প্রার্থী ও নেতারা এই খালে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর তাদের মনে থাকে না।
রসুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু জাফর বলেন, ‘মাদারবুনিয়ার প্রায় দেড় শ’ ছাত্রছাত্রী আমাদের স্কুলে ভর্তি আছে। নৌকায় পারাপারে ঝুঁকি থাকায় অনেকে নিয়মিত স্কুলে আসে না।’
এ ব্যাপারে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো: আতিকুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী মাদারবুনিয়া খালের ওপর একটি সেতুর নির্মাণের জন্য এমপি মহোদয় আমাদেরকে বলেছেন। সেই অনুযায়ী একটি প্রকল্প করে আমরা দিয়ে দিব। ইতোমধ্যে দু’পারে সংযোগ সড়কের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।’
মাদারবুনিয়াবাসী এখন চেয়ে আছে সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।