বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিক শামীম আহমেদের উপর কারারক্ষীদের হামলার ঘটনায় জেলা প্রশাসকের আহবানে গতকাল বিকেলে ত্রিপক্ষীয় সভায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ ৫ জন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের, চার্জশীট প্রদান এবং তিন সদস্যের বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও ৩ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভূত করা হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করায় কিছুটা বরফ গলেছে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে।
জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এস. এম অজিয়র রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম, এডিএম নুরুজ্জামান, কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক, জেল সুপার ইউনুচ জামান, সাংবাদিকদের মধ্যে ছিলেন শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস. এম জাকির হোসেন, ইনডিপেনডেন্ট টিভির বরিশাল ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক মুরাদ আহমেদ, দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহিন, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি গোপাল সরকার, নিউজ-২৪ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান রাহাত খান, দৈনিক সমকালের বরিশাল ব্যুরো প্রধান পুলক চ্যাটার্জী, দৈনিক ইত্তেফাকের বরিশাল ব্যুরো প্রধান হাফিজুর রহমান শাহিন, নিউজ এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি হাসিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান, প্রথম সকাল পত্রিকার সম্পাদক কাজী আল মামুন প্রমুখ।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন কারাগারের অপ্রীতিকর ঘটনায় আমাদের সাথে সাংবাদিকদের মধ্যে বেশ দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। আজকের ত্রি-পক্ষীয় সভায় সবার বক্তব্যের মধ্য বেরিয়ে এসেছে শান্তির বার্তা, এ সভার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর হলো, আমরা আবার সবাই মিলেমিশেই থাকতে পারবো বলে আশা করি।
উল্লেখ্য গত ১২ জানুয়ারি বিকেলে বরিশাল কারাগার থেকে ২টি ভ্যান বোঝাই ২২ বস্তা গম অন্যত্র নেয়ার সময় পুলিশ গমসহ ভ্যান আটক করে। এসময় কারারক্ষী ও পুলিশ গম ও ভ্যান টানাটানি করার সময় যুগান্তর পত্রিকার ফটো সাংবাদিক শামীম আহমেদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় ৮/১০ জন কারারক্ষী অতর্কিতভাবে তাকে ধরে নিয়ে যায় কারাগার কম্পাউন্ডে এবং মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালায় তার উপর প্রকাশ্য দিবালোকে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় নগরীর সকল সাংবাদিকরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।
ওদিকে হামলাকারীদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বরিশাল নিউজ এডিটর কাউন্সিলের সভাপতি হাসিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের বরিশাল প্রধান মুরাদ আহমেদ, দৈনিক সমকাল ব্যুরো প্রধান ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পুলক চ্যাটার্জি, প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি এমএম আমজাদ হোসাইন, দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহীন, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি গোপাল সরকার, সময় টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান ফেরদৌস সোহাগ, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি ও ৭১ টেলিভিশনের বরিশাল প্রধান বিধান সরকার, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান রাহাত খান, মাছরাঙ্গা টেরিভিশনের ব্যুরো প্রধান গিয়াস উদ্দিন সুমন, এশিয়ান টেলিভিশনের বরিশাল ব্যুরো প্রধান ফিরোজ মোস্তফা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক বেলায়েত বাবলু ও বরিশাল নিউজ এডিটর কাউন্সিলরের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান।
কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ১২ জানুয়ারি দুপুরে কারারক্ষীদের পাচার করা গমের ভ্যান কোতোয়ালি থানা পুলিশ আটক করে কারারক্ষীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে।
এ সময় ফটো সাংবাদিক শামীম আহমেদ ছবি তুললে তাকে কারারক্ষীরা মারধর করে কারাগারে আটকে রাখে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কেবল সময়িক নয়, তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার উপযুক্ত শাস্তির দাবি করা হয়।দ