শুকনো মৌসুম আসতে না আসতেই ঢাকা-পটুয়াখালীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ১৫টি নৌরুটে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট বন্ধ হওয়ার পথে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা।
নৌযানগুলোও সময় ধরে চলাচল করতে পারছে না। ফলে নৌ-চলাচলে জোয়ার-ভাটাই ভরসা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১০ অক্টোবর ঢাকা-পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌরুটে চলাচলরত লঞ্চের ২৫ জন মাস্টার এসব রুটে ড্রেজিং করার আবেদন জানিয়ে পটুয়াখালী নৌবন্দরের সহকারী পরিচালককে লিখিতভাবে জানান।
ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, এসব রুটের কবাইর মুখ থেকে কলাগাছিয়া ঘাট পর্যন্ত নদী পথে বিভিন্ন স্থানে নদী ভরাট হয়ে নৌ-চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ভরা বর্ষা মৌসুমে ও জোয়ারের সময় ছাড়া জাহাজ চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে কবাইর মুখ থেকে কারখানা লঞ্চঘাট পর্যন্ত, ঝিলনা মোড়ে দুটি টেকের চর, পটুয়াখালী ঘাটে ঢুকতে এস পেরিকেল বয়া থেকে পটুয়াখালী ঘাট পর্যন্ত, লোহালিয়া গুদারাঘাটের সামনে থেকে বান্দাঘাট মোড় পর্যন্ত, ভুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে কলাগাছিয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ড্রেজিং করা না হলে লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ন অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এদিকে পটুয়াখালী নৌবন্দরের পরিচালক খাজা সাদিকুর রহমান জানান, লঞ্চ মাস্টারদের ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে পরদিনই অক্টোবর বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর ড্রেজিং করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠান।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু না হওয়ায় এ বছরের ১ জানুয়ারি বেশ কয়েকটি লঞ্চ বগার পর কয়েকটি স্থানে চরে আটকে যায়। এর দুদিন পর ৩ জানুয়ারি ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর আবার আবেদন করা হয়।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাট থেকে কারখানা পর্যন্ত সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সময়ে ওইসব স্থানে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নদীর অন্তত ১২টি রুটে ৬৫ ফুটের নীচের অন্তত ১০টি লঞ্চ নিয়মিতভাবে যাত্রী বহন করছে। রুটগুলো হলো, পটুয়াখালী-কোড়ালিয়া ভায়া গলাচিপা, বাবলাতলা বাজার-গলাচিপা, পটুয়াখালী-বাহেরচর ভায়া গলাচিপা, খেপুপাড়া-নিজকাটা, কেশবপুর-পটুয়াখালী, পটুয়াখালী-ভোলাটার্মিনাল ভায়া কালিশুড়ি, কনকদিয়া-পটুয়াখালী, চরমোন্তাজ-গলাচিপা, চরমোন্তাজ-উলানিয়া ভায়া চরকাজল, নিজকাটা-গলাচিপা, উলানিয়া টলারঘাট-গইনখালী এবং কোড়ালিয়া-বোয়ালিয়া স্লুইসগেট।
এ ছাড়াও পটুয়াখালী-বগা-চরগরবদি-ফতুল্লা-ঢাকা রুটে চলাচল করছে ডাবল ডেকারের আরো ৭ থেকে ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চ।
পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ৮ মাইল দৈর্ঘ্যের লাউকাঠি নদীতে অন্তত ৫টি, ১২ মাইল দৈর্ঘ্যরে আন্ধারমানিক নদীতে অন্তত ৭টি, ৩০ মাইল দৈর্ঘ্যের লোহালিয়া নদীতে ২০টি, ৩৫ মাইল দৈর্ঘ্যের তেতুলিয়া নদীতে অন্তত ২৫টি ডুবোচর আছে।
ভুক্তভোগী এমভি বাগেরহাট-২ লঞ্চের মাস্টার সোহরাব জানান, সম্প্রতি গলাচিপা থেকে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। পথিমধ্যে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লোহালিয়া নদীর (জৈনকাঠি এলাকার) মোড়ে নাব্য সংকটের কারণে লঞ্চটি আটকে যায়।
ওই দিন রাত ১টার দিকে জোয়ারের চাপ বৃদ্ধি পেলে লঞ্চটি ছাড়া পায়। এর আগে ঢাকাগামী যাত্রীদের ট্রলারে করে পটুয়াখালীর লঞ্চে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে চলাচলরত কুয়াকাটা-১ লঞ্চের মাষ্টার মো. ইব্রাহিম জানান, এ রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্য সংকট আর ডুবোচর থাকলেও পটুয়াখালীর অংশে তা মারাত্মকভাবে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
তার মতে, পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের আশপাশ, লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীর একাধিক স্থান, বগার আগে পালেরডাঙ্গা, ঝিলনা, কবাই, তাপাল কাঠি, শশীর মোড় এলাকায় নাব্য সংকট চরম আকারে ধারণ করছে।
এসব স্থানে মাঝে মধ্যে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকে। এ সময় লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
একই অভিযোগ সুন্দরবন-১১ ও ৯ লঞ্চের মাষ্টার নজরুল ও মজিবুর রহমানের।
পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করা গেলে এসব রুটের নাব্য সংকট অনেক কমে যাবে বলে জানান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার বিভাগের প্রফেসর ড. মনিরুজ্জামান।
তার মতে, উজান থেকে নেমে আসা পানি নদীতে ঠিকভাবে প্রবাহ করতে পারছে না, তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ, স্লুইসগেট নির্মাণসহ নানা কারণে নাব্য সৃষ্টি হয়। এ থেকে রক্ষার প্রধান উপায় নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনা।