বরিশাল মেট্রোপলিটন ৪টি থানায় ৯৯৯ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারী) বেলা ১১টায় বরিশাল পুলিশ লাইনস্থ (এনটি) অফিসে সেবার উদ্বোধন করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (অতিঃ আইজিপি) মোশারফ হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমানসহ ৪টি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এখন থেকে ‘৯৯৯’ নম্বরে ডায়াল করলেই মিলবে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মতো গত ১২ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশেও চালু হয়েছে জরুরি সেবা ‘৯৯৯’।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, আপাততঃ তিনটি জরুরি সেবা দেওয়া হবে এই ৯৯৯ সেন্টারের মাধ্যমে। পুলিশের সাহায্যের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া হবে। যে কোনও মোবাইল ও ল্যান্ডফোন থেকে সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি কল করে বাংলাদেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে এই সেবা নেওয়া যাবে।’ পর্যায়ক্রমে এ সেবার পরিধি আরও বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জরুরি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০০ কল-টেকার এজেন্ট, ১৯ জন ডিসপ্যাচার ও ৮ জন সুপারভাইজার দিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দৈনিক তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।৯৯৯ এ কল করতে কোনও টাকা খরচ হবে না।
মোবাইল ফোনে টাকা না থাকলেও বিপদগ্রস্ত যেকোনও নাগরিক দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশসহ অন্যান্য জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর সাহায্য নিতে পারবেন। জরুরি সেবা ছাড়াও কোনও অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে, প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনও হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হলে, আশেপাশে দুর্ঘটনা ও আগুনের ঘটনা ঘটলে ৯৯৯ এ কল দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ৯৯৯ সার্ভিসের জন্য বিশাল তথ্য ভা-ারের মোবাইল অ্যাপস ও ওয়েবসাইট রয়েছে, যা ব্যবহার করে জরুরি মুহুর্তে সহযোগিতা দেওয়া হবে। মোবাইল অ্যাপস বা ওয়েব সাইট ব্যবহার করে ৯৯৯ সার্ভিসের হেল্প ডেস্কে সরাসরি কথা বলা ছাড়াও প্রতিনিধির সঙ্গে লাইভ চ্যাট করা যাবে।
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতর দ্বারা পরিচালিত কল সেন্টারগুলোতে সরাসরি কল করা যাবে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর ও লোকেশন ম্যাপও রয়েছে এই অ্যাপস ও ওয়েব সাইটে। যে কেউ নিজের লোকেশনের তথ্য দিলে এই ফিচারটিতে নিকটবর্তী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও লোকেশনের ম্যাপ প্রদর্শিত হবে।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস- ৯৯৯’ পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনা করা হয়েছে। ওই সময়ে নাগরিকদের পক্ষ থেকে সেবা নেওয়ার জন্য ৯৯৯ নম্বরে ২৭ লাখ ১০ হাজার ৭৬৪টি কল আসে। এর মধ্যে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে কল এসেছিল শতকরা ৬৪ দশমিক ৮ ভাগ। এরপরেই ছিল ফায়ার সার্ভিস ও আম্বুলেন্স সেবা নেওয়ার কল।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গত ৮ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে এ সার্ভিসের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ সদর দফতরকে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় প্রশাসনের সহায়তায় ৯৯৯ এর ব্যবহার, প্রচার ও কমিউনিটি সেফটি অ্যাওয়ারনেস কর্মশালা সম্পন্ন করা হয়।
প্রত্যেকটি জেলা থেকেই ৯৯৯ এর কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখা, এর প্রচারণা ও কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।যুক্তরাজ্য, মালেয়েশিয়া, হংকং, পোলান্ড, আরব আমিরাত, বাহরাইন, কেনিয়া, কাতার, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও জিম্বাবুয়েসহ অনেক দেশেই ৯৯৯ শটকোর্ডে জরুরি সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়াতে ‘০০০’, নিউজিল্যান্ডে ‘১১১’, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ‘১১২’, কানাডা ও আমেরিকায় ‘৯১১’ শটকোড দিয়ে জরুরি সেবা সার্ভিস চালু রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।