নদীভাঙনে গত বছরের জুলাই-আগস্টে বসতভিটা হারিয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া-ভেদরগঞ্জের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার। কীর্তনখোলা নদীর ঢেউয়ের তোপে প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বরিশাল সদর আসনের মানুষ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারাই দক্ষিণাঞ্চলের এই দুই এলাকার ভোট চাইতে গিয়েছেন তাদের কাছেই ভোটারদের প্রত্যাশা ছিল, নদীভাঙন প্রতিরোধ করা হোক।
নতুন মন্ত্রীসভায় ঠাঁই পাওয়া নতুন একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রীর এলাকা এই দুই ভাঙন তীরে। তাই পদ্মা-কীর্তনখোলা তীরের ভাঙন প্রতিরোধকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামিম ও উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
আজ মঙ্গলবার (০৮ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন এ দুই মন্ত্রীর প্রথম কর্মদিবসে পরিচিতি হন ও সংবর্ধনা দেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়ে আমি ভাগ্যবান। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কেন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন তা জানি না। তিনি আমার প্রতি যে বিরল সম্মান দিয়েছেন, আস্থা রেখেছেন। স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কাজের মাধ্যমে সেই আস্থা ধরে রাখতে চাই।’
কর্মকর্তাদের জাহিদ ফারুক আরও বলেন, ‘সোজাসাপটা বলতে চাই, আপনারা পরিকল্পনা করবেন কাজের ভার আমাদের। যারা নদীভাঙন এলাকায় বসবাস করে তারাই এর কষ্ট বোঝেন। নদীভাঙনের কারণে অনেক জমিজমার মালিক এখন ঢাকা শহরে রিকশা চালাচ্ছে। বিষয়টি বুঝে আমাদের আরেকটু সতর্ক থাকতে হবে। বরিশারের কীর্তনখোলায় গত আট মাস আগে টেন্ডার হয়েছে। এখনো কাজ শুরুই হয়নি। বরিশাল নয়, এটা যেন কোথায়ও না হয়। ’
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন- ‘আমি মন্ত্রী হতে মানসিকভাবে একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ বৃহত্তর ফরিদপুরে আমার আগে অন্তত ২০ জন ছিলেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছিলেন। আমি এমপি-মন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম। মন্ত্রিপরিষদ গঠনের আগেরদিন আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তুই কর্মীর মতো কাজ করতে পারিস। তাই তোকে এখানে দিলাম। আমি জননেত্রীর এই বিশ্বাস ধরে রাখবো। ’
এনামুল হক শামীম বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন বলে বিভিন্ন এলাকায় থাকতে হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার কারণে বাবাকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে হাতিয়ায় পাঠানো হয়। আবদুর রাজ্জাক সাহেব পানি সম্পদ মন্ত্রী থাকাকালে এই মন্ত্রণালয়ে আসতে হয়েছে। আবার জন্মের দুই বছর পর নড়িয়ার বাড়ি নদীতে ভেঙে যাওয়ায় ভেদরগঞ্জে বাড়ি করতে হয়েছে। নির্বাচনে নড়িয়ার মানুষ আমাকে ভোট দেওয়ার অন্যতম কারণ নদীভাঙন ঠেকানো। এই এলাকার নদীভাঙন ঠেকাতে না পারলে আগামীতে মানুষ ধিক্কার জানাবে। শুধু নড়িয়া নয়, সারা দেশের নদীভাঙন ঠেকাতে কাজ করতে চাই। ’
দুঃখপ্রকাশ করে শামীম বলেন, ‘নড়িয়ার বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হলেও মাত্র ২০ হাজার বস্তা ফেলা হয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথমদিন নদীভাঙন এলাকায় যেতে চাই। সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার গৃহহীন।’