সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পর পর দুই বার তাকে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার চলে যাওয়া দলের অপূরণীয় ক্ষতি। রাজনীতি অনেকেই করেন এদের মধ্যে ভালো মানুষের সংখ্যা খুবই কম। সৈয়দ আশরাফ তাদের মধ্যে বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় সৈয়দ আশরাফের মরদেহ বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতারা বিমানবন্দরে সৈয়দ আশরাফের কফিন গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর সৈয়দ আশরাফুলের স্ত্রী শীলা ইসলাম মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক কন্যার জনক আশরাফুল ইসলাম ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থাতেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।
একাদশ জাতীয় সংসদের নবনির্বাচিত এমপিদের মধ্যে ২৮৯ জন শপথ নিয়েছেন বৃহস্পতিবার। অসুস্থতার কারণে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এদিন শপথ নিতে পারেননি। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর তার শপথ নেয়ার কথা ছিল।
১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দশম সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
তার বাবা ছিলেন বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আশরাফুল ইসলাম ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যখন আব্দুল জলিল গ্রেফতার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে আশরাফুলের বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান। লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন। লন্ডনে বসবাসকালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সে সময় তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ইসলাম ফেডারেশন অব বাংলাদেশি ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের (এফবিওয়াইইউ) শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালের জুনে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন তাকে।