নির্বাচন কমিশন কতৃক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৩ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনী মহারণ শেষ হলো। সারাদেশের সাথে একযোগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ২১টি সংসদীয় আসনে দু-একটি বিচ্ছন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছে। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের কোথাও ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বাধীন কোন প্রার্থী জয় পাননি। কোথাও কোথাও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করলেও ভোটের হিসেবে নূন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্ট।
এদিকে এই ২১টি আসনের মধ্যের ৪টি আসনে জয় পেয়েছে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি ও জাতীয় পার্টি (জেপি)। ফলে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের ১৭ জন প্রার্থী একচেটিয়া জয় তুলেছেন ঘরে। শরিকদের মধ্যে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে, বরিশাল-৩, বরিশাল-৬ ও পিরোজপুর-৩ আসনে। আর অপর শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) জয় পেয়েছেন পিরোজপুর-২ আসনে। ওদিকে ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ২১টি আসনের মধ্যে বিএনপি ১৩টি আসনে ২য় স্থান অধিকার করে। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ২য় হয়েছে ৬টি আসনে।
এদিকে বিএনপি তৃতীয় হয়েছে ৬টি আসনে এবং ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় হয়েছে ৭টি আসনে। বিভাগের ২১টি আসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে সংর্ঘষে কোথাও কোন প্রানহানির ঘটনা ঘটেনি। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ভোট গ্রহণ হয়। যদিও মুলাদীতে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ নম্বর চরকালেখান ইউনিয়নের ষোলঘর কেন্দ্রে সাময়িক ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। আর বরিশাল নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের বারৈজ্জার হাট কেন্দ্রে ইসলামি আন্দোলনের ৭ নেতাকর্মীকে মারধর করে আহত করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বলে জানানো হয়। এদিকে সিএন্ডবি রোড এলাকার শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল কলেজে আওয়ামী লীগের ৭ নেতাকর্মীকে মারধর করে আহত করে বিএনপির নেতারা। মাত্র এই কয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আর কোন বিচ্যুতির তথ্য জানা যায়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের কারনে সুষ্ঠভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগের ছয়জন রিটানির্ং কর্মকর্তার দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। বরিশাল ১ আসন (আগৈলঝাড়া-গৌরনদীর) ১১৫টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পেয়েছেন ২০৫৫০৬। আর বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১৩০৫ ভোট। বরিশাল-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহে আলম। তিনি পেয়েছেন ২,১২,৩৪৪ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন ১১,১৩৭ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,০২,৫৭১। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৩৬ টি। বরিশাল-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকে গোলাম কিবরিয়া টিপু। তিনি পেয়েছেন ৫৪৫৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী এ্যাড. জয়নুল আবেদিন পেয়েছেন ৪৭২৩৫ ভোট এবং নৌকা প্রতীকের শেখ মো: টিপু সুলতান পেয়েছে ১৮১৯৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৫৩,৬৪৯। ভোট কেন্দ্র ছিল ১২৩ টি। বরিশাল-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পংকজ নাথ। তিনি পেয়েছেন ২,৪১,০০৩ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী জে.এম. নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর পেয়েছেন ৯,২৮২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী সৈয়দ মো. নূরুল কারীম। তিনি পেয়েছেন ৭,৪৬১ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,২৩,৫৬৫। ভোট কেন্দ্র ছিল ১০৮ টি। বরিশাল-৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম। তিনি পেয়েছেন ২,১৫,০৮০ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরওয়ার পেয়েছেন ৩১,৩৬২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম। তিনি পেয়েছেন ২৭,০৬২ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৯৭,২৩০। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৭৪ টি। বরিশাল-৬ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নাসরিন জাহান রতনা। তিনি পেয়েছেন ১,৫৯,৩৯৮ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী নূরুল ইসলাম-আল-আমিন পেয়েছেন ১৪,৮৪৫ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন খান। তিনি পেয়েছেন ১৩,৬৫৮ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৪৫,৫২৫। ভোট কেন্দ্র ছিল ১০৯ টি।
বরগুনা-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। তিনি পেয়েছেন ৩,১৭,৬২২ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী মতিয়ার রহমান তালুকদার পেয়েছেন ১৫,৮৫০ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী অলি উল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ১৪,৮৬৯ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪,১৪,৩৮২। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৮০টি। বরগুনা-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান রিমন। তিনি পেয়েছেন ২,০০,৩২৫ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী খন্দকার মাহবুব হোসেন পেয়েছেন ৯,৫১৮ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী গোলাম সরোয়ার হিরু। তিনি পেয়েছেন ৮,০৩০ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৬৮,৩১৬। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১২টি।
পিরোজপুর-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শ. ম. রেজাউল করিম। তিনি পেয়েছেন ২,৩৭,৬১০ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী শামীম সাঈদী পেয়েছেন ৮,৩১৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪,১৮,৯৭৪। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৯৩ টি। পিরোজপুর-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু । তিনি পেয়েছেন ১,৮৯,৪২৫ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেন ৬,৩২৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,২০,৫০৮। ভোট কেন্দ্র ছিল ১০৪ টি। পিরোজপুর-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি পেয়েছেন ১,৩৫,৩১০ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী রুহুল আমীন দুলাল পেয়েছেন ৭,৬৯৮ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১,৮৯,৭৬৩। ভোট কেন্দ্র ছিল ৮১ টি।
ঝালকাঠি-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বজলুল হক হারুন। তিনি পেয়েছেন ১,৩১,৫২৫ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান ওমর পেয়েছেন ৬,১৫১ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১,৭৮,৭৮৫। ভোট কেন্দ্র ছিল ৯০ টি। ঝালকাঠি-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমু। তিনি পেয়েছেন ২,১৪,৯৩৭ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী জীবা আমিনা খান পেয়েছেন ৫,৯৮২ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৯০,৩৩০। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৪৭ টি।
ভোলা-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ২,৪২,০১৭ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীর পেয়েছেন ৭,২২৪ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী মো. ইয়াছিন মো. ইয়াছিন। তিনি পেয়েছেন ৭,০৩৮ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,০৯,৯৩৩। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১৩ টি। ভোলা-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলী আজম মুকুল। তিনি পেয়েছেন ২,২৬,১২৪ ভোট। তার নিকটতম বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহীম পেয়েছেন ১৩,৯৯৯ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশর প্রার্থী ওবায়দুর রহমান। তিনি পেয়েছেন ৮,২৩২ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৯৭,০২৩। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১২ টি। ভোলা-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ২,৫০,৪১১ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. মোসলেহ উদ্দীন পেয়েছেন ৪,০৫৫ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এিনপির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি পেয়েছেন ২,৫০২ ভোট। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরনবী সুমন। তিনি পেয়েছেন ২,২৬০ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৯৩,৫৪৭। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১৫ টি। ভোলা-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনি পেয়েছেন ২,৯৯,১৫০ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. মহিবুল্যাহ পেয়েছেন ৬,২২২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী নাজির উদ্দিন আলম। তিনি পেয়েছেন ৫,০৪৭ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৬৮,৫৫৩। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৩৬ টি।
পটুয়াখালী-১ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহজাহান মিয়া। তিনি পেয়েছেন ২,৭০,৯৭০ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলতাফুর রহমান পেয়েছেন ১৫,১০৩ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ১০,৩৬৯ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৯৩,০৬৬। ভোট কেন্দ্র ছিল ১৫৩ টি। পটুয়াখালী-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ স ম ফিরোজ। তিনি পেয়েছেন ১,৮৫,৭৮৩ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ৯,২৬৭ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী সালমা আলম। তিনি পেয়েছেন ৫,৬৬০ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৫১,৮৫৮। ভোট কেন্দ্র ছিল ১০৮ টি। পটুয়াখালী-৩ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এস এম শাহাজাদা সাজু। তিনি পেয়েছেন ২,১৫,৫৭৯ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী কামাল খাঁন পেয়েছেন ৬,৮১৪ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। তিনি পেয়েছেন ৬,১৭৬ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৯৮,৪৯৭। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১৮ টি। পটুয়াখালী-৪ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুহিব্বুর রহমান মুহিব। তিনি পেয়েছেন ১,৮৮,৮১২ ভোট। তার নিকটতম ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাওলাদার পেয়েছেন ৬,৮০৪ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপির প্রার্থী এ বি এম মোশারেফ হোসেন। তিনি পেয়েছেন ৬,১৮৫ ভোট। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৪৯,০৪৬। ভোট কেন্দ্র ছিল ১১০ টি।