নেইমার না এমবাপ্পে? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শূন্যতা পূরণে কাকে টেনে আনতে চায় রিয়াল মাদ্রিদ? সিদ্ধান্তটা শুধু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে নিতে দিলে উত্তর কী হবে সবার জানা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে পেতে সবকিছু করতে রাজি রিয়াল সভাপতি। কিন্তু তাঁকে ফাঁকি দিয়ে পিএসজিতে চলে গেছেন নেইমার। সেই পিএসজিতেই ভিড়েছেন রিয়ালের অন্য লক্ষ্য কিলিয়ান এমবাপ্পে। মৌসুমের শুরুতে দুজনের দিকেই লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু আনতে পারেনি কাউকেই। কিন্তু নতুন এক তথ্য আশা বাড়িয়ে দিয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্টদের।
কাতারের রাজপুত্রের অধীনে পরিচালিত হয় পিএসজি। একটি রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়ে অর্থবিত্তে সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ক্লাবটি। গত তিন চার মৌসুমে অঢেল টাকা ঢালছে তারা। কিন্তু ২০১৭-১৮ মৌসুমে শুধু এমবাপ্পে-নেইমারের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করার সবাই নড়েচড়ে বসেছে। উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে পিএসজি যে ভেঙেছে এ নিয়ে কারও সন্দেহ নেই, কিন্তু কোন পর্যায়ে ভেঙেছে এ নিয়েই আলোচনা। কদিন আগে জানা গেছে ফিফা ও উয়েফা পিএসজির ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে রাখার নীতি পালন করেছে এত দিন। ফুটবল লিকসের সুবাদে এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর অবশ্য উয়েফা ধুলো ঝেড়ে আবার বসেছে পিএসজির ফাইল নিয়ে।
ফুটবল লিকসের আরেকটি তথ্যই নতুন করে রিয়ালকে আগ্রহী করে তুলেছে। ফ্রেঞ্চ অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডিয়া পার্ট লিকসের তথ্যকে ভিত্তি করে সংবাদ দিয়েছে, ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়ম ভাঙার দায় থেকে বাঁচতে চাইলে এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষিদ্ধ হওয়া আটকাতে চাইলে ১৭০ মিলিয়ন ইউরোর খেলোয়াড় বিক্রি করতে হবে। পিএসজি সে চেষ্টায় করতে যাচ্ছে দলবদলের নতুন মৌসুমে। কারণ, খেলা সংক্রান্ত আয় না থাকলে খেলোয়াড় কেনায় এত অর্থ ব্যয় করা যায় না। যদিও মিডিয়া পার্টের এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি কাতারের অর্থে বলীয়ান এ ক্লাব।
পিএসজির আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা আপাতত স্পোর্টসের কোর্ট অব আরবিট্রেশনে আছে। এই আদালতের রায়ের ওপরই নির্ভর করছে পিএসজির ভাগ্য। তবে যেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সেই চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়া ঠেকাতে খেলোয়াড় বিক্রির কথা ভাবছে তারা।
খেলোয়াড় বিক্রি করে ১৭০ মিলিয়ন ইউরো জোগাড় করা পিএসজির জন্য কঠিন কিছু নয়। নেইমার বা এমবাপ্পেকে বিক্রি করে দিলেই কাজটা এক লহমায় হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা না করে যদি অন্য খেলোয়াড়দের বিক্রি করে কাজটা করতে চায় তারা, তবে কাজটা অনেক কঠিন হবে। কারণ এ দুজন ছাড়া ইউরোপে উচ্চমূল্যে বিকোতে পারে এমন খেলোয়াড় যে নেই তাদের। এডিনসন কাভানি, জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, থমাস মুনিয়েরদের মতো খেলোয়াড়দের এখন আর দুই মৌসুম আগের মতো চড়া দাম নেই। ১৭০ মিলিয়ন ইউরো পেতে চাইলে মার্কো ভেরাত্তি, আদ্রিয়ান রাবিওত কিংবা টিমোথি উইয়াহর মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়দেরও ছাড়তে হতে পারে।
পিএসজির জন্য মাথাব্যথার কারণ রাবিওত এ মৌসুমেই ফ্রি ট্রান্সফারে দল ছাড়তে যাচ্ছেন। তাকে বিক্রি করার উপায় পাচ্ছে না পিএসজি। আর রাবিওত চলে গেলে ও আর্জেন্টাইন লো সেলসোকে রিয়াল বেটিস যদি কিনে ফেলে তখন মধ্যমাঠে একমাত্র ভেরাত্তিই থাকবেন। আর ভেরাত্তিকে তো পিএসজি ছাড়তে রাজি নয় সেটা তো দেড় মৌসুম আগেই বার্সেলোনার সঙ্গে লড়াই করে প্রমাণ করেছে তারা। ফলে ১৭০ মিলিয়ন ইউরোর জন্য তাই নেইমার বা এমবাপ্পেকেই হয়তো বিক্রি করতে হবে পিএসজিকে। নেইমারের জন্য ২২২ মিলিয়ন ও এমবাপ্পের জন্য ১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে পিএসজি। গত দেড় মৌসুমে দুজনের মোট মূল্য আরও বেড়েছে দলবদলের বাজারে।
যদি এ দুজনকে আসলেই বিক্রি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে পিএসজি ধারণা করছে নেইমারের ক্ষেত্রে কিছুটা ক্ষতি মেনে নিতে হবে তাদের। বিশ্বকাপে নেইমারের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পর ইউরোপের সেরা হটকেক এখন আর নেইমার নন, সেটা এখন এমবাপ্পে। তাই এমবাপ্পেকে বিক্রি করে বেশি অর্থ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু মাঠের ভূমিকা এবং স্পনসর ও বিপণনে নেইমার অনেক বেশি এগিয়ে। তা ছাড়া পিএসজিকে সব সময় সংবাদের শিরোনামে রাখার পেছনেও মূল ভূমিকা নেইমারের। তাই বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হবে পিএসজির জন্য।
পিএসজি যে সিদ্ধান্তই নিক, এখন নেইমার বা এমবাপ্পের জন্য চড়া দাম হাঁকানো কঠিন হবে পিএসজির জন্য। কারণ ইউরোপের অন্যান্য বড় দলগুলো এখন জেনে গেছেন খুব দ্রুত ১৭০ মিলিয়ন ইউরো দরকার পিএসজির। রিয়ালের সঙ্গে বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার সিটি কিংবা ইউনাইটেডও নিশ্চয় এখন লাইনে দাঁড়িয়ে যেতে পারে যে কোন একজনকে দলে টেনে নিতে!