কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়? টপ-মিডল অর্ডার গেল তল, লোয়ার অর্ডার বলে কত জল! শেষ উইকেট জুটিটা কিছুতেই ভাঙছিল না। চা বিরতির সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দিয়েও অপেক্ষায় আম্পায়াররা! শেষ পর্যন্ত আর দিনের শেষ সেশনে খেলা গড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি কাউকেই। দুই টেস্টেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে হেরে গেল। দুই টেস্টের ৩০ সেশনের ১৪ সেশন খেলাই হয়নি। আর ১৬ সেশনের ১৪টাতেই ছিল বাংলাদেশের দাপট।
এভাবেই জিততে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সিরিজ শুরুর আগে সতীর্থদের বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে অসহায় হারের জবাব দাপুটে জয় দিয়েই দিতে হবে। ওরা যেমন হোম কন্ডিশন আর নিজেদের শক্তির জায়গা কাজে লাগিয়েছে, বাংলাদেশকেও তা করতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এক টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে এবং অন্য টেস্টে রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ জিতলও একটি ইনিংস ব্যবধানে, আর অন্যটি রানে। বাংলাদেশের কাছে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হেরে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ইতিহাসেই সপ্তম বড় পরাজয়।
সাকিব অবশ্য ম্যাচ শেষে দাবি করলেন, পাল্টা জবাব দেওয়া-টেওয়া কিছু নয়। বাংলাদেশ অন্য কিছু প্রমাণ করতে চেয়েছে। এখন সব দলই হোম অ্যাডভান্টেজ নেয়। সেটাই ছিল প্রমাণের তাগিদ, ‘জবাব দেওয়া না, তবে এখন হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের একটা সুবিধা-অসুবিধা থাকে। ওরা ওদের হোমের সুবিধাটা নিতে পেরেছে, আমরা আমাদের হোমের সুবিধা নিয়েছি। ওভাবে হারার পর আমাদের অবশ্যই অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল। বিশেষ করে নিজেদের মাটিতে। সেটা আমরা করতে পেরেছি। সেটার জন্য আসলে আমি সব সতীর্থকে ধন্যবাদ জানাই, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই যে এই জিনিসটায় বিশ্বাস করেছে, সিরিজ শুরুর আগে।’
অধিনায়কের ভূমিকায় ফেরা সাকিব সতীর্থদের এই সিরিজের আগে লক্ষ্যই বেঁধে দিয়েছিলেন। সে কথাও জানালেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আমি অনেক বেশি ছিলাম এই সিরিজটাতে। সবার কাছেই খুব বেশি করে চাচ্ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সবাই যার যার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। কেউ হয়তো সফল হবে, কেউ হবে না। সবার মনের ভেতর ওই বিশ্বাসটা ছিল, সবাই দলের জেতার জন্য অবদান রাখতে চায়। সব সময় রাখতে চায়, কিন্তু এবার সবার মধ্যে আলাদা রকমের একটা আগ্রহ ছিল সেটা বোঝা যাচ্ছিল।’
তার মানে এমন নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভরাডুবির পক্ষে কোনো অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন। সাকিব বললেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আমরা কেউই এ ধরনের পারফরম্যান্স আশা করিনি। আমরা এমন হারের পর মিটিং করেছি, তারপর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম ওই সফরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। যেহেতু আমরা টেস্ট ফরম্যাটে ভালো করিনি, আমাদের হোমে একটা সুযোগ ছিল প্রমাণ করার। ওই কারণেই আমরা চেয়েছিলাম কিছু একটা করি, যেন মানুষ অন্তত ভুলতে পারে বা বুঝতে পারে যে, না, তাদের হোমে সুবিধাটা তারা নিতে পেরেছে, আমাদের হোমে আমাদের যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু করতে পেরেছি।’
এখানে তাই উইকেট বা স্পিনারদের ওপর বাড়তি নির্ভর করার প্রসঙ্গ আলাদা করে আলোচনার গুরুত্ব দেখেন না সাকিব। বিশেষ করে পেসার ছাড়া চার স্পিনার নিয়ে খেলাটার পক্ষে শক্ত অবস্থান যে তাঁর ছিল, এটা আরও একবার পরিষ্কার করে দিলেন, ‘ওদের দুর্বলতা ও আমাদের শক্তির কথা চিন্তা করেই, দুইটা দিক চিন্তা করেই আমাদের জন্য এমন টিম কম্বিনেশন তৈরি করা আদর্শ ছিল। সেটাই আমরা করার চেষ্টা করেছি।’
তার মানে এমন নয় বাংলাদেশ চিরকালই এমন চার স্পিনার কৌশলে অটল থাকবে। কিংবা একই ধরনের উইকেট বানাবে। প্রতিপক্ষ যে আসবে, সে অনুযায়ী প্রস্তুত হতে হবে বলে মনে করেন সাকিব, ‘সব সময় শুধু নিজেদের শক্তির জায়গা চিন্তা করলে একটু ভুল হবে। অনেক সময় প্রতিপক্ষের শক্তি দেখেও উইকেট তৈরির চেষ্টা করা হয়। দিন শেষে যেটাই করি আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, সেটা তিনটা বিভাগেই। সেদিন ড্রেসিং রুমে বলছিলাম, একটা টেস্ট জেতার পর যে সন্তুষ্টি আসে, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি জিতলে সেটা আসে না। এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, এত বেশি পরিশ্রম করতে হয়, এত বেশি মাথা খাটাতে হয় আর এত বেশি সময় ধরে খেলোয়াড়দের সামর্থ্যেরও পরীক্ষা চলতে থাকে।’
সাকিব মনে করেন, দলের ধারাবাহিক সাফল্য মানসিকতায় একটা বড় পরিবর্তন আনে। দেশের মাটিতে যেকোনো দলকে হারাতে পারি, এই বিশ্বাস বাংলাদেশ দলের মধ্যে চলে এসেছে। এবার বিদেশেও ভালো করার দিকে মনোযোগ থাকবে। সেটাই বলছিলেন টেস্ট অধিনায়ক, ‘আমরা তিনটা বিভাগে (ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং) যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে থাকি, আমাদের সামনে সব সময় সুযোগ আসতে থাকবে। আমি মনে করি আমরা এমন দল হতে চলেছি যারা যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো জায়গায় জেতার সামর্থ্য রাখে।’