চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির এমনই এক ম্যাচ নেইমারের ক্যারিয়ারের বাঁক ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আজও কি তেমন কিছু হবে? আজকের চ্যাম্পিয়নস লিগের রাতের সেরা আকর্ষণ পিএসজি-লিভারপুল ম্যাচ হতে পারে নেইমারের ম্যাচ। যে ম্যাচ আরও একবার নেইমারের ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ গতিপথ ঠিক করে দেবে হয়তো। এ ম্যাচে নায়কের বেশে দলকে জেতাতে পারলে নেইমার সাম্প্রতিক সময়ে চলা গুঞ্জনগুলোকে কিছুদিনের জন্য হলেও স্তিমিত করে দিতে পারবেন। আর যদি ম্যাচটা পিএসজি হেরে যায়? বলা কঠিন!
দুই মৌসুম আগে পিএসজির কাছে ৪-০ গোলে পিছিয়ে থেকে ফিরতি লেগ খেলতে নামা ম্যাচে বার্সেলোনা জন্ম দিয়েছিল অবিশ্বাস্য রূপকথার। ৬-১-এ জেতা ফুটবল ইতিহাসে সেরা প্রত্যাবর্তনগুলোর একটির গল্প লেখা সেই ম্যাচে বার্সেলোনার আসল নায়ক ছিলেন নেইমার। অথচ সেদিন ম্যাচ শেষে সতীর্থেরা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেসিকে। অনেকে বলেন, নেইমার যে বার্সেলোনা ছেড়ে যাবেন, সেটি সেই রাতেই ঠিক করে দেওয়া। মেসির ছায়া থেকে বেরোতেই হবে!
কিন্তু সেই ছায়া থেকে বেরিয়ে নেইমার নিজেই নিজের ছায়া হয়ে রইলেন। ফ্রান্সের ফুটবলে পিএসজি আর নেইমারের দাপট অবিস্মরণীয়। কিন্তু যে নেইমারের পেছনে পিএসজি এখনো বিশ্বাস হতে চায় না এমন একটা অঙ্কের টাকা খরচ করল (২২২ মিলিয়ন ইউরো), তার শোধ তো নেইমারকে দিতে হবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। গতবার পিএসজি দ্বিতীয় রাউন্ডে বাদ পড়ল। এবার পিএসজি বাদ পড়ার শঙ্কায় গ্রুপ পর্ব থেকেই!
মোনাকোতে গত আগস্টে যখন চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের ড্র হলো, তখনই মনে হয়েছিল, সি গ্রুপটা দারুণ রোমাঞ্চকর হবে। সেটাই হচ্ছে। এই গ্রুপে এখনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই পরের রাউন্ডে যাওয়ার। কোনো দলেরই নকআউট পর্ব নিশ্চিত হয়নি এখনো, শেষ ম্যাচের আগে সেটা হওয়াও কঠিনই মনে হচ্ছে। এমন কঠিন হিসাব-নিকাশ সামনে রেখেই আজ নিজের মাঠে লিভারপুলকে আতিথ্য দিচ্ছে পিএসজি।
চারটি করে ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর লিভারপুল ও নাপোলি দুই দলের পয়েন্ট ৬ করে। পিএসজির ৫, রেড স্টার বেলগ্রেডের ৪। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় আপাতত শীর্ষস্থানটা নাপোলির। রাতে গ্রুপের অন্য ম্যাচে যারা খেলবে বেলগ্রেডের বিপক্ষে।
আজই শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ফেলার সবচেয়ে ভালো সুযোগটা অবশ্য লিভারপুলেরই মনে হচ্ছে। পার্ক দে প্রিন্সেসের এই ম্যাচে যদি ক্লপের দল পিএসজিকে হারায়, আর অন্য ম্যাচে বেলগ্রেড নাপোলিকে না হারাতে পারে, তাহলেই নকআউট পর্বে চলে যাবে লিভারপুল। আর নাপোলি জিতলে লিভারপুলের সঙ্গে তারাও উঠে যাবে শেষ ষোলোতে।
কিন্তু লিভারপুলের দুশ্চিন্তা, ম্যাচটা পিএসজির মাঠে। যেখানে চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির পরিসংখ্যান দুর্দান্ত। প্রায় সাত বছর আগে কাতারি ব্যবসায়ী নাসের আল-খেলাইফি দায়িত্ব নেওয়ার পর চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের মাঠে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়া আর কোনো দলের কাছে হারেনি পিএসজি। এটা নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস দেবে টমাস টুখেলের দলকে। আর এই লিভারপুলের কাছেই অ্যানফিল্ডে গত সেপ্টেম্বরে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ৩-২ ব্যবধানে হারার স্মৃতিও তো টাটকাই পিএসজির। এবার নিজের মাঠে প্রতিশোধ নিতে হবে না!
তা প্রতিশোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে পারেন যাঁরা, সেই নেইমার-কিলিয়ান এমবাপ্পে আজ খেলবেন কি না, এটাই যে নিশ্চিত নয়! আন্তর্জাতিক বিরতির সময়ে দেশের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট নিয়ে ফিরেছেন দুজনেই। যে চোট দুজনকে মাঠে নামতে দেয়নি তুলুজের বিপক্ষে লিগে সর্বশেষ ম্যাচেও। টুখেল অবশ্য বেশ আশাবাদী, আজ দুজনকেই পাবেন। কিন্তু আসলে কতটা ফিট নেইমার-এমবাপ্পে, সেটি এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
পিএসজির দুশ্চিন্তাটা একটু হলেও বেশি। নইলে কী আর পিএসজি অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা বলেন, ‘খুব ভালো না খেললে লিভারপুলকে হারানো যাবে না। গড়পড়তা খেলে এই মানের দলকে কখনো হারানো যায় না। আমাদের প্রস্তুতিতে তাই কোনো ফাঁক রাখা যাবে না।’
সিলভারা জানেন, এই ম্যাচে হার ওদের চ্যাম্পিয়নস লিগের পথচলাও থামিয়ে দিতে পারে এখানেই। আর বড়দিনের আগেই চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার চেয়ে ভয়ংকর আর কী হতে পারে পিএসজির জন্য! বা নেইমারের জন্য?
নেইমার শতভাগ ফিট না হলেও এই ম্যাচ খেলতে মুখিয়ে থাকবেন। দলকে জেতাতে চাইবেন, দুই মৌসুমে যেমন খাদের কিনার থেকে বের করে এনেছিলেন বার্সাকে। কিন্তু যদি না পারেন? নেইমারের দিকে ধেয়ে যাবে সংশয়ের তির। আর তাতে তাঁর পিএসজি ছাড়া হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কে জানে, আজ রাতেই?