একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাদের পদমর্যাদা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সরকার জাতির কাছে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ভয়-ভীতিহীন পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। নির্বাচন কমিশনের এ দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য সরকারি অফিস ও সংস্থাগুলোর সব ধরনের সহযোগিতা করতে বাধ্য। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারি সাহায্য সহযোগিতার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা অত্যাবশ্যক।
আরও বলা হয়, নির্বাচনের সময় নির্বাচনী এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বশর্ত। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব মূলত সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের উপর অর্পিত থাকলেও এ ব্যাপারে স্থানীয় জনসাধারণ এবং নেতৃবৃন্দের সাহায্য ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার এ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের হিসেবে সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদগুলোর দায়িত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এ প্রেক্ষাপটে দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, নিজ নিজ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সময় সময় যেসব আদেশ নির্দেশ জারি করেছে কিংবা করবে তা প্রতিপালন করবে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা।
নির্বাচনী মিছিল, সভা ও প্রচারণা যাতে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ও বিধি অনুযায়ী হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোনো নির্বাচনী অফিস বা প্রতীক বা পোস্টার নষ্ট করার যেকোনো প্রচেষ্টা রোধে সামাজিক প্রতিরোধ গঠনে সহায়তা করা। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদে এমন কোনো উন্নয়ন স্ক্রিম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করা, যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তিতে বা প্রচারণার পক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে।
এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ কিংবা উপজেলা পরিষদে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান বা অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না, যা কোনো প্রার্থীর ভোটপ্রাপ্তি বা প্রচারণার কাজে প্রভাব বিস্তার করবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস, যানবাহন এবং অন্যান্য সম্পত্তি কোনো প্রার্থীর নির্বাচন বা প্রচারণার কাজে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।
মাশুল পরিশোধ করে ব্যক্তিগত কাজে কোনো যানবাহন ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া যাবে না। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে বা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। ভোট কেন্দ্র নির্মাণসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল কাজে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রয়োজন হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তা দেবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের পদমর্যাদা সরকারি সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এসব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, শৈথিল্য প্রদর্শন করলে বা অবহেলা করলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ/আইন/বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ আদেশ জারির তারিখ থেকে নির্বাচনের পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত বহাল থাকবে।