শামীম আহমেদ ॥ উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীণতম ও বড় দিপাবলী উৎসব আজ সোমবার বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মহাশশ্মানে অনুষ্ঠিত হবে। দিপালী উৎসবকে ঘিরে শ্মশান ও শ্মশানের সমাধিস্থাপনাগুলো ধোয়া মোছার কাজ শেষে রং ও লেখার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার রাত নয়টা ৪৮ মিনিটে ভূত চতুর্দ্দশী আরম্ভ হয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত এই তিথি থাকবে। এ সময়ের মধ্যে এখানে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দিপালী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাত ১২টা এক মিনিটে মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে শ্রী শ্রী শ্মশান কালী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরই এ বৃহৎ শ্মশানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যরে মধ্যদিয়ে উৎসব উদ্যাপন করা হয়।
উৎসবটির অন্যতম অনুষঙ্গ হলো শ্মশাণ দীপাবলী। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় চলবে পূজার্চনা। একইসাথে ঘরে ঘরে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রদীপ জ্বেলে আয়োজন করা হবে দীপাবলী উৎসবের। পুরো শ্মশানজুড়ে জ্বলবে কয়েক লাখ প্রদীপ। পরলোকগতদের আত্মার শান্তি কামনা করে শ্মশাণে শ্মশাণে প্রদীপ জ্বালানো হবে। আলোর বন্যায় ভাসবে মহাশ্মশাণ।
মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, প্রতিবছর ভূত চতুর্দ্দশী পূণ্য তিথিতে দিপাবলী উৎসব হয়ে থাকে। প্রিয়জনের সমাধিতে দীপ জ্বালিয়ে দেওয়ার এ প্রথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে হয়ে আসছে।
তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মহাশ্মশানে প্রায় লক্ষাধিক সমাধি রয়েছে। শ্মশান সমিতির নেতারা জানান, এখানে রয়েছে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বসহ সমাজসেবীদের সমাধি। যারমধ্যে মৃত্যুর ৮০ বছর পর ভারতের কেওড়াতলা মহাশ্মশান থেকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের চিতাভস্ম এনে এ মহামশ্মশানে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা সত্যানন্দ দাশ ও পিতামহ সর্বানন্দ দাশের সমাধি। বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথের সমাধি, বিপ্লবী মনরোমা বসু মাসিমা, শিক্ষাবিদ কালীস চন্দ্র ঘোষসহ আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সমাধি রয়েছে। প্রতিবছর এ শ্মশানে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের উত্তরসূরীরা শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এছাড়াও নেপাল এবং ভারতসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। মহাশ্মশান রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে মহাশ্মশানে বাহারি আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিবারের মতো র্যাব ও পুলিশের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পুরো শ্মশানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজ করছে। শ্মশান এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নগরীর লাকুটিয়া খাল ঘিরে প্রায় চার একর জায়গায় জুড়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ মহাশ্মশানে প্রায় পৌনে দুইশ’ বছর সময় ধরে এ রেওয়াজ চলে আসছে। সে অনুযায়ী প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে দিপালী উৎসবে পুরো শ্মশানজুড়ে জ্বলে উঠবে কয়েক লাখ মোমের প্রদীপ।