* লক খুলে ইন্সটল করা হয় নতুন সফ্টওয়্যার
* এরপর যায় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে
* বিক্রির জন্য ডিসপ্লে করা হয় গোপন স্থানে
* বসুন্ধরার কয়েকটি দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার
* ২৯টি মোবাইল ও ৬৬টি ল্যাপটপ উদ্ধার
জরুরি কাজে মোটরসাইকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে দোয়েল চত্বর দিয়ে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন শাহজাহান। দোয়েল চত্বর মোড়ে যেতেই দেখেন রিকশায় থাকা যাত্রীর ল্যাপটপের ব্যাগ হ্যাচকা টানে ছিনিয়ে নেয়ার দৃশ্য। শাহবাগ মুখে ছুট দেয় মোটরসাইকেলে থাকা দুই ছিনতাইকারী। এমন দৃশ্য দেখে গন্তব্য পরিবর্তন করে ছিনতাইকারীদের পিছু নেন শাহজাহান।
শাহবাগ সিগন্যালে ছিনতাইকারীদের দেখে চিৎকার শুরু করেন শাহজাহান। তার চিৎকারে একজন পালিয়ে গেলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সহযোগিতায় আটক করা হয় রাকিবুল ইসলাম ওরফে আদিফুল ইসলাম ওরফে অর্ণব (২৭) নামের এক ছিনতাইকারীকে। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই করা ল্যাপটপও।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক ছিনতাইকারী রাকিবুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দেন।
রাকিবুল জানান, মোবাইল, ল্যাপটপ ছিনতাইয়ের চক্র ‘টানাপার্টি’র সঙ্গে জড়িত আরও ৪ স্তরের চক্র। একেকজনের কাজ একেক রকম।
শাহবাগ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনার সূত্র ধরে আটক ছিনতাইকারী রাকিবুলের দেয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় আরও ৬ জনকে। উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৯টি মোবাইল ও ৬৬টি ল্যাপটপ।
ছিনতাইকারী ও চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার অভিযানে নের্তৃত্বদানকারী শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার ছিনতাইকারী রাকিবুল ইসলামকে হাতেনাতে আটকের সময় পালিয়ে যায় হাফিজ আল জাবিদ খান ওরফে তন্ময় (২৫)।
রাকিব জানায়, হাফিজ আল জাবিদ ও আরেক ছিনতাইকারী আবিদ আহম্মেদ সোহাগ ওরফে আরিফের (২০) সাথে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করে আসছিল। ওই দুজনের কাছে বিপুল পরিমাণ মোবাইলফোন ও ল্যাপটপ গচ্ছিত আছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোহাম্মদপুর রিংরোড টিক্কাপাড়া এলাকার পৃথক বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
অভিযানে হাফিজ আল জাবিদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইলফোন, ২টি ল্যাপটপ এবং আবিদের কাছ থেকে আইফোন ১০টি, ১৩টি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিনজন জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ, মিরপুর, তেজগাঁও এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই করে আসছিল। ছিনতাইকৃত মোবাইলফোন ও ল্যাপটপ তারা আরেক চক্রের হাতে হস্তান্তর করেন। ওই চক্রটি মোবাইল ও ল্যাপটপের লক খুলে নতুন সফ্টওয়্যার ইন্সটল করে দেয়। এরপর যায় বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। সেখানে বিক্রির জন্য গোপন স্থানে ডিসপ্লে করা হয়। সেখান থেকে যায় শেষ চক্রের হাতে যারা ফোনগুলো বিভিন্ন স্থানে ভাগ ভাগ করে বিক্রি করে দেয়।
ওই তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের বি ব্লকের লেভেল-৫ এর রাজ ল্যাপটপ গ্যালারির কর্মচারী রবিউল ইসলামকে ছিনতাই করা ৩৫টি ল্যাপটপসহ গ্রেফতার করা হয়।
এরপর শপিং কমপ্লেক্সের ‘ল্যাপটপ ড্রিম’ এর মালিক কাজী আতাউল্যাহ সাহেদকে (৩২) ১১টি ল্যাপটপসহ, গ্যাজেট প্লানেট দোকানের ম্যানেজার সাইফুল ইসলামকে (২৭) ১৫টি ল্যাপটপসহ এবং গ্যাজেট ফিউচার দোকানের ম্যানেজার মো. রাশেদকে ২টি ল্যাপটপসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ছিনতাকারী চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতারের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলার আরো তথ্য উদঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা পথচারী বা রিকশা যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইলফোন ও ল্যাপটপ ছিনতাই করে থাকে। এই ছিনতাইকারী চক্রকে আড়াল থেকে সহযোগিতা করে আসছে সাইফুল, আলতাফ, সোহান হোসেন, আলভী, আহম্মেদ রিয়াজসহ চার স্তরের আরও ডজেনখানেক প্রতারক। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।