অনলাইন ডেস্ক: নাব্য ও ফেরি সংকট, ফেরিঘাটগুলোর দুর্বল অবকাঠামো এবং সর্বোপরি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘ্ন হচ্ছে না। ফলে দেশের উপকূলীয় তিনটি বিভাগ এবং সব সমুদ্রবন্দর ছাড়াও প্রধান দুটি স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগে উন্নতমানের সড়ক অবকাঠামো থাকলেও তা পুরোপুরি কাজে আসছে না।
চট্টগ্রাম-বরিশাল-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা-বরিশাল ও বরিশাল-পিরোজপুরের মধ্যে ফেরি পারাপারে সারা বছর ভোগান্তি লেগেই আছে। অথচ এ মহাসড়কের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সঙ্গে ভোলা-বরিশাল হয়ে মোংলা এবং খুলনা ছাড়াও বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর যুক্ত রয়েছে। এমনকি এ সড়কপথেই খুলনা, মোংলা, বরিশাল, বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সমগ্র বিভাগের সড়কপথে প্রায় অর্ধেক দূরত্ব কমানো সম্ভব। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির চাপও কমবে।
মহাসড়কটিতে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ফেরিঘাটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তী দেশের দীর্ঘতম ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট ফেরিঘাট। সাগর মোহনার ভাটি মেঘনার ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফেরি সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে মাত্র দুটি ফেরি চলাচল করত। সম্প্রতি আরো দুটি কে-টাইপ (ছোট আকার) ফেরি যুক্ত হয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে একটি প্রায়ই বিকল থাকছে। বুধবার পর্যন্ত ক্যামেলিয়া নামের ফেরিটি বিকল ছিল। ক্যামেলিয়া সচল করার পর ‘কিষাণী’ ফেরি মেরামতের জন্য নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কারিগরি পরিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। এছাড়া মেঘনার পূর্ব তীরের বুড়ির খাল এলাকায় নাব্য সংকটে ভাটির সময় ফেরি চলতে পারে না।
একই অবস্থা মহাসড়কের ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তী ভেদুরিয়া-লাহারহাট ফেরিঘাটে। এখানে তিনটি ‘ইউটিলিটি টাইপ-১’ ফেরি থাকলেও গড়ে একটি নিয়মিত বন্ধ থাকছে। এছাড়া নানা সমস্যার কারণে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ঘাটে কখনই ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন হচ্ছে না। ঘাটে মেঘনার দুই তীরে প্রতিদিনই যানবাহনের দীর্ঘ সারি অপেক্ষায় থাকে। এতে চট্টগ্রাম থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা হয়ে বরিশাল যেতে কখনো তিন-চারদিনও লেগে যাচ্ছে। লাহারহাট-ভেদুরিয়া ঘাটেও পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
গতকালও ভোলা-লক্ষ্মীপুর ঘাটে প্রায় ২০০ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। আর ভোলা-বরিশাল রুটের ভেদুরিয়া-লাহারহাট ঘাটে অপেক্ষমাণ ছিল আরো সোয়াশ গাড়ি।
পিরোজপুরের কাছে কঁচা নদীতে বেকুটিয়া ফেরিঘাটও ব্যতিক্রম নয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর দীর্ঘদিনের পুরনো তিনটি ‘ইউটিলিটি টাইপ-১’ ফেরি দিয়ে চলছে যান পারাপার। সম্প্রতি একটি নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। অন্য দুটির ইঞ্জিন দুই দশকেরও বেশি পুরনো। মাত্র একটি ফেরি ১ ঘণ্টা অন্তর যানবাহন পারাপার করছে। ফলে প্রতিটি গাড়িকেই সিরিয়াল পেতে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
উপকূলীয় এ জাতীয় মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী গাড়ির চালকরা বলছেন- ভোলা-লক্ষ্মীপুরে চারটি কে-টাইপ এবং ভোলা-বরিশাল তিনটি ইউটিলিটি এবং বেকুটিয়া ঘাটে সার্বক্ষণিক দুটি ফেরি চলাচল নিশ্চিত করতে পারলেই চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশাল হয়ে মোংলা-খুলনা-বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরের পথটি সংক্ষিপ্ততম এবং নির্বিঘ্ন হতো।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির বাণিজ্য ও কারিগরি পরিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলে সবাই ফেরি সংকটের কথা জানান। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এ সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
বরিশাল সওজ ফেরি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আযম শেখ বলেন- বরিশাল বিভাগের সবক’টি রুটের ফেরি সচল রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিছু ফেরি খুবই পুরনো, সেগুলো বারবার বিকল হওয়ায় কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে। তবে ফেরির ইজারাদাররা আরো আন্তরিক হলে দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।