আদালতে চার্জশিট গ্রহণের আগে সরকারি কর্মচারিদের গ্রেফতারে অনুমতি নিতে হবে-এমন বিধান রেখে সংসদে ‘সরকারি চাকরি বিল, ২০১৮’ উত্থাপণ করা হয়েছে। রোববার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপণ করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। পরে বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
প্রস্তাবিত এই আইনে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো আদালতে ফৌজদারি বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা বিচারাধীন থাকলে বিচারাধীন এক বা একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা দায়ের বা নিস্পত্তির ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
বিলের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের আওতাভুক্ত কোনো কর্ম বা কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা।
বিলের ২৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সেবা পাওয়ার জন্য আবদেন করলে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, কিংবা সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে আবেদন নিস্পত্তি করতে হবে।
২৬ ধারায় বলা আছে, কোনো কর্মচারী নির্ধারিত বা যুক্তিসংগত সময়ে সেবা দিতে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে সেবাপ্রার্থী ব্যক্তিকে দিতে পারবে।
৩২ ধারায় বলা আছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীর ওপর বিধি মোতাবেক একাধিক লঘু ও গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে। লঘু দণ্ডের মধ্যে রয়েছে- তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি ও বেতন-ভাতা স্থগিত করা, বেতন স্কেল অবনমিত করা এবং সরকারি অর্থ ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা। গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে- বেতন নিম্ন স্কেলে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ করা এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।
৩৮ ধারায় বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্ম থেকে বরখাস্ত হয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
৪২ ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা এক মেয়াদের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ওই ব্যক্তি দণ্ড আরোপের রায় প্রদানের দিন থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত হবেন। তবে কর্মচারী এক বছর বা তার কম মেয়াদের জন্য দণ্ডিত হলে কর্তৃপক্ষ তাকে তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন স্থগিত করা, পদ ও বেতন স্কেলের অবনমন করা এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপুরণ আদায় করতে পারবে।
তবে এই বিলে যাই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনক মনে হলে তিনি সাজা পাওয়া ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিতে পারবেন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারবেন। ৪২ ধারার এই বিধান সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকুরি সংক্রান্ত একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হওয়ায় নতুন এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।