বর্তমানে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশী। এবং প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ধূমপান, সূর্যের রশ্মি, রাসায়নিক পদার্থ, বাড়তি ওজন সহ আরও নানান কারণে কান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনো মানুষ। জরিপে দেখা যায় সাধারণত প্রতি ৪ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মারা যান ১ জন ব্যক্তি। কিন্তু চিকিৎসার অভাব ও অবহেলার কারণে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ জন পর্যন্ত।
অনেক সময় ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো ভালো ভাবে না জানার কারণে শরীরে ছড়িয়ে পরে ক্যান্সার। যা বেশি মাত্রায় ছড়ানোর পর চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব হয় না। ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে ভালো ভাবে জানলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারকে নির্মূল করা সম্ভব হয়। তাই আমাদের জানতে হবে ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে।
অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন কমে যাওয়া
কোন কষ্ট না করেও ওজন কমতে থাকলে খুব খুশি হওয়ার কিছুই নেই। এটা হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। ডায়েটিং কিংবা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ওজন কমতে থাকলে সমস্যা নয়। সমস্যা হলো কোন প্রকার ডায়েটিং কিংবা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করে ওজন কমতে থাকলে। এবং বেশি মাত্রায় কমতে থাকলে। অবশ্যই ডাক্তারের কাছে চেকআপের জন্য যাওয়া দরকার।
ক্রমাগত জ্বর এবং কাশি হওয়া
ঠাণ্ডা কিংবা ঋতু পরিবর্তনের সময় একটু আধটু জ্বর বা কাশি হওয়াকে আমরা কেউই পাত্তা দিই না। কিন্তু যদি টানা জ্বর উঠা এবং কাশি থাকা শুরু করে তবে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কারন ক্রমাগত জ্বর ওঠা এবং কাশি হতে পারে ব্লাড ক্যান্সার, লিম্ফোমা, লিউকোমিয়ার লক্ষণ। ক্রমাগত জ্বর এবং কাশি থাকা অবহেলা করবেন না কখনোই।
অতিরিক্ত এবং প্রায়ই মাথা ব্যথা এবং মেরুদণ্ড ব্যথা হওয়া
মাইগ্রেনের কারণে অনেকেই মাথা ব্যথায় ভুগে থাকেন। ঠাণ্ডা লেগেও অনেকের মাথা ব্যথা হয়। কিন্তু একটানা অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য চেকআপ করান। কারণ অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হতে পারে ‘ব্রেইন ক্যান্সারের’ লক্ষণ। আবার একটানা বসে থাকলে পিঠ না মেরুদণ্ড ব্যথা হয় বলে আমরা মেরুদণ্ড ব্যথাকে পাত্তা দেই না। কিন্তু এটিও হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। সুতরাং অবহেলা না করে চেকআপ করান।
চামড়ার নিচে ফোলা বা দলা ভাব
ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হচ্ছে শরীরের চামড়ার নিচে গুটি গুটি হয়ে ফুলে ওঠা বা দলা পাকানো গোটার মতো অনুভব করা। তবে এই গুটি গুলো বুক বা বুকের আশে পাশে অথবা যৌনাঙ্গে দেখা দিলে ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাত, পায়ে দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই।
অস্বাভাবিক রক্তপাত
কফ বা কাশির সাথে রক্ত যাওয়া ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া পস্রাব-পায়খানার সাথে রক্ত পরাও হতে পারে ব্লাডার ক্যান্সারের কারন। স্তন থেকে রক্ত পরা স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ। এইসব লক্ষণ দেখার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
শরীরের চামড়ায় পরিবর্তন
চামড়ায় ছোট ছোট দানা হওয়া কিংবা শরীরের চামড়ার মাঝে মাঝে রঙের পরিবর্তন, কোন কারণ ছাড়াই জখমের মত দাগ হওয়া সবই মেলানোমার লক্ষণ। অর্থাৎ চামড়ার ক্যান্সারের লক্ষণ। এইসব দাগ কিংবা পরিবর্তনের দিকে লক্ষ রাখুন। চামড়ায় কোনো ধরনের পরিবর্তনে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
খুব দ্রুত ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়া
অনেক সময় কাজের ব্যস্ততায় কিংবা কাজের মধ্যে থাকলে আমরা ক্লান্তি বোধ করি। এমনকি মাঝে মাঝেই ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্থ থাকি বলে এই নিয়েই কাজ করি। অনেক সময় বিস্রাম নেয়ার পরও এই ক্লান্তি দূর হয় না বলে আমরা ভাবি আমাদের পরিমিত বিশ্রাম হচ্ছে না। কিন্তু আমরা ভাবতেও পারি না এটিও হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ। সামান্যতেই ক্লান্ত এবং অবসাদবোধ হওয়াকে অবহেলা না করে চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যান।