জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘সেই সেনা শাসন এক-এগারোর আইন উপদেষ্টা, সাংবিধানিক পরামর্শদাতা, মাইনাস-টু থিওরির প্রচারক, সেই তথা-কথিত সংস্কারবাদীরা, যারা দল থেকে বাদ পড়েছে, বহিষ্কৃত হয়েছে আজকে তারা যুক্ত হয়েছেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে।’
শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত ‘বিএনপির অব্যাহত মিথ্যাচার ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে’ কর্মী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে চক্রান্তকারী শক্তিরা। মহানগর নাট্যমঞ্চে সে দিন যারা হাতে হাত ধরে শপথ নিয়েছিল তারা কারা? সুকুমার রায়ের একটা কবিতা আছে-‘গোঁফেই আমি, গোঁফেই তুমি-গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’ সেই গোঁফধারী ব্যক্তিরা।’
মেনন বলেন, তারা ঐক্য করেছে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে। আজ তারা যুক্ত হয়েছেন, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই, কাদের সাথে ঐক্য করছেন? সেদিন এখানে উপস্থিত ছিল বিএনপির মহাসচিবসহ অন্যান্য নেতারা। তাদের ইতিহাস কী জানা নাই? ১৪ দল আমরা জান বাজি রেখে লড়াই করেছি ২০০৪ সাল থেকে। আমাদেরকে রাজপথে নামতে দেওয়া হয় নাই, আমাদেরকে লাঠি পেটা করা হয়েছে। জনগণের অধিকারের জন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। একুশে আগস্টের ঘটনা কী আমরা ভুলে গেছি? আমরা ভুলে গেছি সেই জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা?
তিনি বলেন, আমরা ২৯ তারিখের কর্মসূচি আগেই ঘোষণা করেছিলাম। যখন আমরা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে বসেছিলাম তখন তারা আমাদের বলেছিল এটা মহাসমাবেশ করার জন্য। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে আজকের এই কর্মী সমাবেশকে জনসভায় রূপান্তর করেছি। হঠাৎ করে দেখলাম বিএনপি তার জনসভার তারিখ পরিবর্তন করে ২৯ তারিখ ঘোষণা করল। গণমাধ্যমে কথা উঠলো পাল্টাপাল্টি হচ্ছে। আমরা পাল্টাপাল্টি করি নাই, করব না।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, ‘কারণ যারা ৯ বছরে ৯ দিনও আন্দোলন করতে পারে নাই, অনুমতি ছাড়া রাস্তায় নামতে পারে না, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের, ১৪ দলের কোনো পাল্টাপাল্টি প্রয়োজন নাই। আমরা দেখেছি বেশ কিছু দিন ধরে, সামনে নির্বাচনকে বানচাল ও প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যর্থ করার জন্য একের পর এক চক্রান্ত চলছে।’
মেনন বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণের প্রতিরোধ সংগঠিত করতে হবে। যখন তারা ধরা পড়বে তখন তারা ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কথা বলছে। গতকাল দেখলাম বিএনপি ২০ দলের মিটিংয়ে জামায়াত বলেছে, আমাদের নিয়েই যদি এত সমস্যা হয় আপনারা ঐক্য করুন। অন্য দিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, আমরা তো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করছি, জামায়াত তো এখানে নেই। কথায় বলে, হাত ঘুরিয়ে ভাত খাওয়া। বাংলার জনগণ কখনও ভুল করে নাই, করবে না। তাদের চেহারা ধরা পড়ে গেছে। নির্বাচন হবে, নির্বাচন হচ্ছে। ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ মিলে উন্নয়ন-অসাম্প্রদায়িক ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি একটা প্রশ্ন রেখে বলতে চাই, আপনাদের যদি এত জনপ্রিয়তা থাকে নির্বাচনে আসুন। আগামীকাল আপনারা জনসভা করবেন, ৭ দফা দাবি, ৯ দফা লক্ষ্য। কথা তো সেই একই। শুনে রাখুন যদি আবার আগুন সন্ত্রাস, হত্যা, নির্বাচন বর্জনের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে চান-জনগণ এবার আপনাদের আর ক্ষমা করবে না।’
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এ কর্মী সমাবেশ সঞ্চালন করেন ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক শাহে আলম মুরাদ। সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, বাংলাদেশ জাসদ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রমুখ।