আলিবাবার প্রিয় গ্রাহক ও অংশীদারেরা,
আলিবাবার ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ লগ্নে আমি আপনাদের কিছু দারুণ তথ্য জানাতে চাই। আমাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে, আজ থেকে ঠিক এক বছর পর ২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আলিবাবার ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আলিবাবা গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্থলাভিষিক্ত হবেন বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড্যানিয়েল ঝ্যাং। (নেতৃত্ব পর্যায়ের) এ পরিবর্তনকে সহজ ও সফল করতে পরবর্তী ১২ মাস আমি ড্যানিয়েলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করব। তবে অংশীদারদের নিয়ে ২০২০ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা পর্যন্ত আমি আলিবাবার পরিচালনা পর্ষদে থাকব।
এ পরিবর্তন পরিকল্পনা নিয়ে গত ১০ বছর আমি অনেক ভেবেছি। প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ আমি সেই পরিকল্পনার ঘোষণা দিতে পেরে ভীষণ আনন্দিত। আলিবাবার অংশীদার ও এর পরিচালনা পরিষদকে ধন্যবাদ। একই সঙ্গে আলিবাবায় আমার সব সহকর্মী ও তাঁদের পরিবারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ গত ১৯ বছর ধরে আপনাদের সবার বিশ্বাস, সমর্থন ও যৌথ উদ্যোগেই আজকের এ শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন সম্ভব হয়েছে।
এই পরিবর্তন আমাদের আলিবাবার পরবর্তী ধাপে উন্নীত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে, যেখানে ব্যক্তির বদলে করপোরেট সুশাসনের ওপর প্রতিষ্ঠান নির্ভর করে। এ পর্যায়ে মেধার উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষ দৃশ্যমান হয়।
১৯৯৯ সালে আলিবাবা প্রতিষ্ঠার সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যার জন্য চীনের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্ব গর্ববোধ করবে, যা তিনটি শতাব্দী অতিক্রম করে অন্তত ১০২ বছর টিকে থাকবে। যদিও আমরা জানতাম যে, কারও পক্ষেই এ কোম্পানির সঙ্গে ১০২ বছর যুক্ত থাকা সম্ভব নয়। সুশাসন ও মেধার উন্নয়নের ধারাবাহিকতাই পারে আলিবাবাকে টেকসই করতে। কোনো কোম্পানিই শুধু এর প্রতিষ্ঠাতাদের ওপর নির্ভর করে টিকতে পারে না। আমারও এ সত্য জানা আছে। শারীরিক শক্তি ও ক্ষমতার সীমার কারণেই কারও পক্ষে আজীবন চেয়ারম্যান ও সিইওর দায়িত্ব বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।
জ্যাক মা সরে যাওয়ার পর আলিবাবার টেকসই উন্নয়ন কী করে ধরে রাখা সম্ভব—এ প্রশ্ন আমরা নিজেদের ১০ বছর আগে করেছিলাম। করপোরেট নেতৃত্বের ধারা অক্ষুণ্ন রাখার এ সমস্যা সমাধানের একটি মাত্র পথ আমরা খুঁজে পেয়েছিলাম। আর তা হলো একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের সুশাসনের একটি স্বকীয় সংস্কৃতি ও মেধাবী উত্তরসূরি গড়ে তৈরিতে একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। গত ১০ বছর ধরে আমরা এ লক্ষ্যেই কাজ করেছি।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক হিসেবে আমি এ লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে ভীষণ গর্বিত। একজন শিক্ষকের সব সময়ের চাওয়াই থাকে, শিষ্য যেন তাঁকে ছাড়িয়ে যায়। এ কারণে আমার ও প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিল এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে তরুণ ও মেধাবীরা নেতৃত্ব পর্যায়ে উঠে এসে আমাদের নেওয়া ‘যেকোনো প্রেক্ষিতেই ব্যবসার সহজীকরণ’ নীতি ও লক্ষ্যকে এগিয়ে নেবে। বিশ্বজুড়ে তরুণ ও নারীদের নেওয়া বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা উদ্যোগকে সহযোগিতার মাধ্যমে এ লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলা আমার নেশা। প্রথম দিন থেকেই এটা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল। এ সুযোগ পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। জ্যাক মা-র চেয়ে আরও বহু মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দিকে মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমেই শুধু এ স্বপ্ন অনুধাবন করা সম্ভব।
আলিবাবা শুধু এর ব্যবসা, পরিসর ও এর অর্জনগুলোর জন্যই অসাধারণ নয়। একই লক্ষ্য ও দর্শনে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাই এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাদের অংশীদারি ব্যবস্থা, স্বকীয় সংস্কৃতি ও মেধাবী কর্মীবাহিনী আমাদের প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী ভিত গড়ে দিয়েছে। বলা প্রয়োজন যে, ২০১৩ সালে সিইওর দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকে গত পাঁচ বছর ধরে আলিবাবা এ শক্ত ভিতের ওপর ভর করেই সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানকে টেকসই করা ও এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের সবচেয়ে উদ্ভাবনী সমাধানটি ছিল অংশীদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে উদ্ভাবন, নেতৃত্ব, জবাবদিহি ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা রক্ষার মতো বড় পরিসরের কোম্পানিগুলোয় হরহামেশাই অনুভূত হয় এমন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। কয়েক বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি ও কাঠামোর মধ্যকার ভারসাম্য সৃষ্টি করে আমরা আমাদের ব্যবস্থাপনা মডেলটি তৈরি করেছি। কোনো ব্যক্তির ওপর আস্থা স্থাপন কিংবা শুধু কাঠামোকে অন্ধভাবে অনুসরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে ব্যক্তি, কাঠামো ও অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতির মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকতে হবে। আমাদের অংশীদারি ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক সুরক্ষার উদ্যোগ আমাদের সব গ্রাহক, কর্মী ও অংশীদারদের মন জয় করে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রতিষ্ঠাকালেই আমরা বুঝেছিলাম যে, আলিবাবাকে একদল মেধাবীর ওপর নির্ভর করতে হবে। বহু বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর আজ আলিবাবা প্রচুরসংখ্যক উচ্চমানের মেধাবীকে নিয়ে গর্ববোধ করে। আমার ভেতরের শিক্ষক সত্তা আমাদের কর্মীবাহিনী, নেতৃত্ব, লক্ষ্যভেদী মানসিকতার সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করে। একই সঙ্গে আমি আমাদের ব্যতিক্রমী ব্যবসায়িক নেতৃত্ব ও ড্যানিয়েল ঝ্যাংয়ের মতো মেধাবী পেশাদারকে নিয়েও গর্বিত।
ড্যানিয়েল আলিবাবা গ্রুপের সঙ্গে ১১ বছর ধরে আছেন। সিইওর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দারুণ মেধা, ব্যবসায়িক ধীশক্তি ও লক্ষ্যভেদী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়ে আসছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে আলিবাবা টানা ১৩ প্রান্তিকে ধারাবাহিক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাঁর বিশ্লেষণী ক্ষমতার তুলনা নেই। তিনি আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নিয়েছেন। উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীল ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর সাহসও তাঁর রয়েছে। (এ কারণে) অনুমিতভাবেই চীনা ব্যবসায়িক সংবাদমাধ্যম তাঁকে ২০১৮ সালের সেরা সিইও হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর এ সবকিছুর মাধ্যমেই তিনি তাঁর দল গ্রাহক, কর্মী ও অংশীদারদের আস্থা অর্জন করেছে। আলিবাবার মশাল ড্যানিয়েল ও তাঁর দলের হাতে হস্তান্তর করার এ সিদ্ধান্ত তাই সব দিক থেকেই ঠিক। এটাই সঠিক সময়। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদেই আমি জানি যে, তাঁরা প্রস্তুত। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
নিজের বিষয়ে বলতে হয় যে, আমার এখনো বহু স্বপ্ন রয়েছে, যার পেছনে আমি ছুটতে চাই। যারা আমাকে জানে, তারা জানে যে, আমি অলস বসে থাকা পছন্দ করি না। আলিবাবার একজন প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা করছি। অংশীদার হিসেবে আমি অবদান রাখতে চাই। একই সঙ্গে আমি ফিরে যেতে চাই শিক্ষা ক্ষেত্রে, যা আমাকে এখনো আমাকে ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত করে। কারণ এটিই আমি ভালোবাসি। পৃথিবী অনেক বড়, আর আমি এখনো তরুণ। তাই আমি নতুন কিছু করতে চাই; এ ছাড়া নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের আর কী উপায়!
আজ একটি প্রতিশ্রুতিই আমি দিতে পারি: আলিবাবা মানে কখনোই শুধু জ্যাক মা বোঝাত না, তবে জ্যাক মা সব সময় আলিবাবারই থাকবে।
জ্যাক মা
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮