রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় রোববার দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার ১২ শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম নূর নাহার ইয়াসমিন এ আদেশ দেন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) তাহেরা বানু। পুলিশ বলছে, গত ৬ আগস্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় অবস্থিত আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দুষ্কৃতকারীরা সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়, পুলিশের ওপর হামলা করে। এ ঘটনার সঙ্গে ১২ আসামির জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে গতকাল রোববার ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান ওই মামলা করেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত ১২ শিক্ষার্থী হলেন তারেক আজিজ, মুজাহিদুল ইসলাম, ইফতেখার আলম, জাহাঙ্গীর আলম, রায়হানুল আবেদীন, মাহফুজ আহমেদ, তারিক আজিজ, মেহেদী হাসান, জহিরুল ইসলাম, সাইফুল্লাহ বিন মানসুর, আল আমিন ও বোরহান উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজ, টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা রয়েছেন। ২ জনকে আজ আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়। পুলিশ আদালতকে বলেছে, এ মামলায় গ্রেপ্তার ১২ জনই শিবিরের সক্রিয় কর্মী। তবে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। তাঁরা আদালতকে বলেন, তাঁরা সবাই শিক্ষার্থী। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন। শিক্ষার্থীদের আইনজীবী কে এম জসীম উদ্দিন বলেন, তিনি আদালতে বলেছেন, এসব শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ সেপ্টেম্বর। তবে পুলিশ বলছে, তাঁদের গতকাল গ্রেপ্তার করেছে। শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিনের আইনজীবী মাহফুজার রহমান বলেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ঘটনার মামলায় তাঁর মক্কেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারেক আজিজকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা আরও একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এ মামলায়ও তাঁকে দুই দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। এর আগে গতকাল রোববার সাইফুল্লাহ বিন মানসুরের বাবা মানসুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর দুই সন্তান সাইফুল্লাহ ও সিফাতকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সিফাতকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাইফুল্লাহর সম্প্রতি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি হয়েছে। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিতে তিনি ঢাকায় এসে ছোট ভাই সিফাতের মেসে ওঠেন। সেখান থেকে দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। মানসুর রহমানের ভাষ্য, সিফাত ফিরে এসে বলেছেন, ডিবি অফিসে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তাঁরা নিরাপদ সড়ক ও কোটা আন্দোলনে ছিলেন কি না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও বিজি প্রেস এলাকা থেকে ৩১ জনকে তুলে নিয়ে যায়। এক দিন পর ১২ জনকে আটকে রেখে বাকি শিক্ষার্থীদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই ১২ জনকেই আজ রিমান্ডে নেওয়া হলো।