যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে মহিলাদের ফাইনালের রাতটা দুটি স্মরণীয় হয়ে রইল টেনিসপ্রেমীদের কাছে। প্রথমত, টেনিসের জগতে জন্ম হলো এক নয়া তারকার। দ্বিতীয়ত, হার নিশ্চিত জেনে চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ালেন সেরেনা উইলিয়ামস।
জাপানি তারকা নাওমি ওসাকার জন্য তখন ফ্ল্যাশিং মিডোয় হাততালি পড়ছে। নতুন চ্যাম্পিয়নের নাম নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন দর্শকরা। এমন দৃশ্য অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছিল ওসাকার। ছোট থেকে যাকে আদর্শ বলে মেনেছেন, যাকে দেখে টেনিস খেলার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, সেই কিংবদন্তি সেরেনাকেই নাকি হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। টেনিসভক্তদের মতো এ এক অবিস্মরণীয় রাত ওসাকার কাছেও। বিশ্বের সেরা তারকাকে হারিয়ে জাপানের হয়ে প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব পকেটে পোরেন ২০ বছরের তরুণী। তবে শনিবার ফাইনালের কোর্টে শুধুই ওসাকার গর্বের কাহিনি লেখা হলো না, তাকে অনেকখানি ছাপিয়ে গেল সেরেনা ও চেয়ার আম্পায়ারের বাদানুবাদের ঘটনা।
আর্থার অ্যাশে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা একটা দুর্দান্ত ম্যাচ উপভোগ তো করলেনই, সেই সঙ্গে সাক্ষী থাকলেন চূড়ান্ত নাটকীয় কিছু মুহূর্তের। ঘটনার সূত্রপাত দ্বিতীয় সেটের দ্বিতীয় গেমের সময়। ওসাকা প্রথম সেট জিতে নেন ৬-২ ব্যবধানে। তারপর দেখা যায় প্লেয়ার বক্স থেকে সেরেনাকে কিছু ইঙ্গিত করছেন তার কোচ প্যাট্রিক। যে কারণে মার্কিন তারকাকে সতর্ক করেন চেয়ার আম্পায়ার কার্লোস ব়্যামোস। আর এতেই মেজাজ হারান সেরেনা। আম্পায়ারকে চিৎকার করে বলতে থাকেন, তিনি কোর্টে দাঁড়িয়ে কোচের থেকে কোনো পরামর্শ নেননি। কেরিয়ারে কখনো প্রতারণা করেননি তিনি।
তার কথায়, “জেতার জন্য কখনো মিথ্যের আশ্রয় অবলম্বন করিনি। তার চেয়ে ভালো আমি হেরে যাব।” তবে কোর্টে দাঁড়িয়ে চেয়ার আম্পায়ারের প্রতি সেরেনার এমন আচরণ নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। যিনি খেতাবজয়ী ওসাকার আদর্শ, তিনিই কিনা ফাইনালে মেজাজ হারালেন!
দ্বিতীয় সেটের গেম চলাকালীন পিছিয়ে পড়ে সজোরে ব়্যাটেক ছুঁড়ে ফেলতেও দেখা যায় ২৩ টি গ্র্যান্ড স্লামের অধিকারীকে। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়। এরপর ডকেট পয়েন্ট কেটে নেয়ায় ব়্যামোসকে ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। আর তখনই চেয়ার আম্পায়ারকে ‘মিথ্যেবাদী’, ‘চোর’ অপবাদ দিয়ে চিৎকার করে ওঠেন সেরেনা। বলেন, “আপনি মিথ্যাবাদী। আমি বেঁচে থাকতে আমার কোর্টে আর কখনো আপনাকে দেখা যাবে না।”
এমন ঘটনায় সেরেনার বিরুদ্ধে ‘মৌখিকভাবে অপমান’-এর অভিযোগ তোলেন ব়্যামোস। চেয়ার আম্পায়ার পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিলে খেলায় আরও এগিয়ে যান ওসাকা। ক্ষুব্ধ সেরেনা এরপর টুর্নামেন্টের রেফারিকে নিজের অভিযোগ জানান। বারবার বলতে থাকেন, তিনি কোনো ভুল করেননি। কোনো নিয়মভঙ্গ করেননি। উল্টো তার অভিযোগ, দ্বিচারিতা করেছেন চেয়ার আম্পায়ারই। তাকে অপমানও করা হয়েছে। এত তর্ক-বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েও তাই বিশেষ হাসি ফুটল না ওসাকার মুখে। তিনি মনে মনে যেন বুঝে গিয়েছিলেন, তাকে ছাপিয়ে এ রাত টেনিস জগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে সেরেনার ‘অখেলোয়াড়োচিত’ আচরণের জন্য।