সুখে-দুঃখে সব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। আগামী দিনেও এভাবে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
শনিবার বিকালে বরিশালে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই কথা বলেন ভারতীয় হাইকমিশনার। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অডিটোরিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা একাডেমি ট্রাস্ট আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তিনি।
হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ভারতের বাহিনী একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। সেই সম্পর্ক এখন আরও শক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রয়াসে এই সম্পর্ক অনবদ্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘সুসময়ে কিংবা দুঃসময়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটি উৎকৃষ্ট দেশ হিসেবে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নও হয়েছে।’
বাংলাদেশে চরমপন্থী নিয়ে যে ধারণা ছিল সেটাও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে জানান ভারতীয় হাইকমিশনার।
শ্রিংলা বলেন, ‘ভারত এখন বাংলাদেশে ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাবনা, পটুয়াখালী, জামালপুর, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও যশোরে ৫০০ বেডের হাসপাতাল এবং যৌথভাবে বন্দর, সড়ক, রেলপথ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে ভারত।’
‘আমরা রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্কুল ও পাঠাগার নির্মাণ করছি। বরিশালে আমরা কাজ করতে পারলে আমাদের ভালো লাগবে।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সফরে এসে বলেছিলেন, পেহলে তো হাম পাস পাস থে, আব হাম সাথ সাথ হে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নয়নমূলক দেশগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
শ্রিংলা জানান, মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি ও চেক প্রদানের যে প্রকল্প সেটা প্রথম ২০০৬ সালে চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৬২১ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে এবং ২১ কোটি টাকার একটি তহবিল ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তিনটি উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এগুলো হলো, নতুন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বৃত্তি প্রকল্প, অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা।
হাইকমিশনার বলেন, ২০১৭ সালে নতুন মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্প চালু হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পাঁচ বছরে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তি প্রদান করা হয় এবং এই উদ্দেশ্যে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পুরাতন এবং নতুন প্রকল্পগুলো একত্রিত হলে ভারত সরকারের দ্বারা মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পের জন্য মোট ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
হর্ষবর্ধন আরও বলেন, এছাড়া খুলনা থেকে কলকাতা রেলপথে বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পর অনেকে বরিশাল এক্সপ্রেস চালু করার কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়টিও আমাদের চিন্তায় রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা একাডেমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. আবুল আজাদের সভাপতিত্বে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৯নং সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ, সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, পঙ্কজ দেবনাথ, শের ই বাংলা একে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোশাররফ হোসেন, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আজাদ মিয়া, বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ১২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতদের ৫০ হাজার টাকা ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের ২০ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে শিক্ষার্থী মাসুদা খানম ইমাকে চেক বিতরণের মধ্যে দিয়ে পর্যায়ক্রমে ১২০ শিক্ষার্থীকে চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।