মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সবসময়ই লড়াই করে যেতে হয়। তারা সফল না হওয়া পর্যন্ত হাল ছাড়েন না। এমনকি সফলতা পেলেও নিরলস পরিশ্রম করে যান আন্তরিকতার সঙ্গে। তেমনি একজন সফল ভিডিও সম্পাদক এম এ রশিদ। দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিশ্রম করতে করতে আজ একটি অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন। তার সেই সংগ্রাম ও সফলতার গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন-
১৯৮৮ সালে রংপুর সদরের সাতগাড়া নামক স্থানে জন্ম এম এ রশিদের। অভাব-অনটনকে উপেক্ষা করেই পড়াশোনা করেছেন রংপুর সরকারি কলেজে। বাবা মো. আব্দুল জব্বার আলী ও মাতা মোছা. রাবেয়া বেগমের তিন ছেলেসন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান তিনি।
শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল নাটকে অভিনয় করার। সে স্বপ্নকে লালন করে ২০০৫ সালে ঢাকায় আসেন। হঠাৎ পরিচয় হয় মিডিয়াব্যক্তিত্ব শামীম জামানের সঙ্গে। তার সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ডিরেকশন দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায় সেখান থেকে চলে আসেন এফডিসিতে। এভাবেই চলতে থাকে তার কার্যক্রম।
মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করতে করতে শিখে ফেলেন ভিডিও সম্পাদনার কাজ। তখন মিডিয়ায় ফিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন। তবে এখন তিনি ফ্রিল্যান্স কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভিডিও সম্পাদনাকে। বর্তমানে একটি বেসরকারি শিশুতোষ টেলিভিশনে (দুরন্ত) ভিডিও সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন।
টেলিভিশনে যে সব অনুষ্ঠান দেখে দর্শকরা আনন্দে মেতে ওঠেন; সে সব অনুষ্ঠানে ক্যামেরার পেছনে অফুরন্ত ধৈর্য নিয়ে দৃষ্টিনন্দন করে তোলাই তার কাজ। বাংলাদেশের কয়েকজন সফল ভিডিও এডিটরের মধ্যে এম এ রশিদ একজন। নাটক, প্রামাণ্যচিত্র, চলচ্চিত্রসহ বেশকিছু জনপ্রিয় কাজ করেছেন তিনি। জনপ্রিয় টিভি নাটক ‘হাতবদল’, ‘আসিতেছে তারাখান’ ও ‘চোখ’ অন্যতম।
পাশাপাশি ভিডিও সম্পাদনা বিষয়ক লেখালেখিও করেন। তার একটি সংগঠন রয়েছে। যার নাম ‘ভিডিও সম্পাদক সেচ্ছাসেবী সংগঠন’। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। খুব ছোট পরিসরে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করলেও অনেকের নজর কাড়ে খুব কম সময়েই। এছাড়া সংগঠনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা, বেকারত্ব দূরীকরণ, আর্থিক সহযোগিতা, গরিব মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সহায়তা, পথশিশুদের ঈদের পোশাক দেওয়া এবং দুস্থ রোগিদের বিনামূল্যে রক্তদান করা।
রশিদের গড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে ভিডিও সম্পাদনার ওপর ফ্রি ক্লাস নেওয়া হয়। বর্তমানে মোহাম্মদপুর সরকারি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ওই সংগঠনের ৭-৮ জন মেয়ে ভিডিও এডিটর হিসেবে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন।
এম এ রশিদ বলেন, ‘একটা সময়ে খুব কষ্ট করেছি। যা সবাইকে বোঝাতে পারবো না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমার মতো খুব কম সময়ে এমনভাবে জায়গা তৈরি করতে পারেননি কেউ। কারণ আমি কাজের কোয়ালিটি বিবেচনায় রেখে কাজ করি। তাই আমার পেমেন্টও অন্যদের চেয়ে বেশি।’
একটি কাজে কেমন আয় করা যায় এমন প্রশ্নে রশিদ বলেন, ‘অন্যরা একটি নাটক সম্পাদনা করলে ৪-৫ হাজার টাকা নেন। কিন্তু আমি ১২-১৫ হাজারের নিচে করি না। কারণ বর্তমানে মিডিয়ার কাজের মান খুব খারাপ। অল্প টাকায় শিক্ষানবিশ এডিটরদের দিয়ে কাজ করানো হয়। ফলে খুব ভালো কাজ মার্কেটে নেই।’
সংগঠনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল ডিরেক্টররা কাজ করে টাকা দিত না। সে জন্য একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছি। কেউ কাজ করিয়ে টাকা না দিলে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী টাকা উঠানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’
সফলতা প্রসঙ্গে রশিদ বলেন, ‘কোয়ালিটি না থাকায় এখন বাইরে ফ্রিল্যান্স কাজটা খুব খারাপ দিকে চলে যাচ্ছে। এ কথা সত্য যে, একটি কাজের পেছনে হাজারো বাধা-বিপত্তি থাকবেই। তবে ওই কাজে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই।’