বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ পাকিস্তান বিশ্বের পঞ্চম পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হতে পারে। বর্তমানে দেশটির ১৪০টি থেকে ১৫০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে। এ ধারা বজায় থাকলে এই সংখ্যা ২০২৫ সাল নাগাদ ২২০ থেকে ২৫০টিতে গিয়ে দাঁড়াবে।
দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ অনুসরণ করা পর্যবেক্ষকদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে।
পাকিস্তান নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ২০১৮ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের এখনকার ওয়ারহেডের সংখ্যা মার্কিন সামরিক বাহিনীর ধারণার চেয়েও বেশি।
প্রতিবেদনটির তিন লেখক হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসন, রবার্ট এস নরিস ও জুলিয়া ডায়মন্ড বলেন, এই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানের মজুদ বাস্তবসম্মতভাবে বেড়ে ২২০ থেকে ২৫০টি ওয়ারহেডে পৌঁছাতে পারে।
যদি তাই হয়, তাহলে এটি পাকিস্তানকে বিশ্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশে পরিণত করবে বলে ওই তিন লেখকের ধারনা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত অনুমানে জানিয়েছিল, ২০২০ সাল নাগাদ ইসলামাবাদের কাছে ৬০ থেকে ৮০টি ওয়ারহেড থাকতে পারে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা বিষয়ক সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদনটি বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্টে প্রকাশিত হয়েছে।
মূল প্রতিবেদক এম ক্রিস্টেনসন ওয়াশিংটনভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের (এফএএস) সঙ্গে সম্পর্কিত নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন প্রজেক্টেরও পরিচালক।
প্রতিবেদনটিতে গত এক দশকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন আত্মবিশ্বাস থেকে উদ্বেগে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
বিশেষ করে ইসলামাদ কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের সূচনা করার পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদকরা বলেন, বেশ কয়েকটি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, প্লুটোনিয়াম উৎপাদনে সক্ষম চারটি রিয়্যাক্টর ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার বিস্তৃতি- সবমিলিয়ে পাকিস্তানের এখন যে মজুদ আছে আগামী ১০ বছরে তা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও ওয়ারহেড, আরও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও পারমাণবিক উপাদান উৎপাদনে সক্ষম এমন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তৃতি অব্যাহত রেখেছে বলেও ধারণা দিয়েছেন তারা।
বেসরকারি উপগ্রহ থেকে তোলা পাকিস্তানি সেনা দুর্গ ও বিমান বাহিনীর ঘাঁটিগুলোর বিপুল সংখ্যক ছবিতে স্থানান্তর করা যায় এমন উৎক্ষেপক ও ভূগর্ভস্থ স্থাপনার কাজের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে, যার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তিমত্তার সম্পর্ক আছে বলে অনুমান প্রতিবেদকত্রয়ের।
যদিও পারমাণবিক অস্ত্রসম্ভার বৃদ্ধি হবে কি না তা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এর মধ্যে মূল দুটি বিষয় হচ্ছে- কতো সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্র ছুড়তে সক্ষম উৎক্ষেপক পাকিস্তান মোতায়েন করতে চায় এবং ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের বৃদ্ধি।
তিন প্রতিবেদকের ভাষ্য, এক দশকের মধ্যে সাড়ে তিনশর কাছাকাছি ওয়ারহেড মজুদ করে পাকিস্তান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রধর রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
তারা বলেন, এ গুঞ্জনকে অতিরিক্ত বলেই মনে করছি আমরা। কারণ ওই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে তাদের গত দুই দশকের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ গতিতে অগ্রসর হতে হবে।
কৌশলগত মাত্রাকে এড়িয়ে সামরিক হুমকি মোকাবেলায় নতুন স্বল্প মাত্রার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক অবস্থান ঠিক করেছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
“এর মাধ্যমে তারা এমন প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করতে চায়, যে নকশা কেবল পারমাণবিক হামলার প্রতিক্রিয়া দেখাতেই করা হয়নি, একইসঙ্গে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের আক্রমণ ঠেকাতেও করা হয়েছে।”
পাকিস্তানের এ পারমাণবিক অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য প্রতিবেদকদের।
তারা বলেন, ভারতের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনাকে তারা খাটো করে দেখেছিল।