আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কর্তৃত্ব আদালতের রয়েছে।
নেদারল্যান্ডস-এর দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বার তাদের এ রায় দিয়েছে।
তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন একমত পোষণ করলেও একজন ভিন্নমত দেখিয়েছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌশলী আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে সেটির তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কিনা।
সে প্রেক্ষাপটে আইসিসি’র প্রি-ট্রায়াল চেম্বার রায় দিয়েছে যে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে।
ফলে আইসিসি মনে করেছে রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।
এ রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন।
তবে আদালত জানিয়েছে যে এ ধরণের তদন্ত একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।
আইসিসি’র উদ্যোগ এবং ঘটনাক্রম
. এপ্রিল মাসে আইসিসির প্রধান কৌসুলি আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের উপর মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্তের অনুমতি চেয়েছিলেন।
. মে মাসের প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে আইসিসি বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে। এবং ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের জবাব চাওয়া হয়েছে।
. জুন মাসে আইসিসি মিয়ানমারের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়েছে এবং ২৭ জুলাই-এর মধ্যে জবাব দিতে বলেছে।
. ৯ অগাস্ট মিয়ানমারের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উদ্যোগ এখতিয়ার বহির্ভূত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায় আসার ১১দিন আগে জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের দায়ে মিয়ানমারের সেনা প্রধানসহ শীর্ষ ছয়জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত এবং বিচার হওয়া দরকার।
এছাড়া, ঘটনা বিচারের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহবান জানানো হয়েছে জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে।
২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখের বেশি।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, লুটপাট, অপহরণ আর ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।