লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়া দলগুলোর সংঘর্ষের সুযোগে কারাগার থেকে প্রায় ৪০০ বন্দী পালিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে গতকাল রোববার ত্রিপোলির আইন জারা কারাগার থেকে পালিয়েছে ৪০০ বন্দী। কারাগারের মধ্যে দাঙ্গা বেধে গেলে কারারক্ষীরা ফটক খুলে দিতে বাধ্য হন।
কারা কর্তৃপক্ষের তথ্যের বরাতে আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কারাগারের ভেতর দাঙ্গা বন্ধে ব্যর্থ হয়ে কারারক্ষীরা বন্দীদের চাপে ফটক খুলে দেন। কারাগারটিতে শুধু পুরুষ বন্দীরা থাকে।
ত্রিপোলির দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আইন জারা কারাগারের বন্দীদের মধ্যে অনেকে লিবিয়ার নিহত স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির সমর্থক রয়েছে। ২০১১ সালে গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভে ওই বন্দীরা হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়।
জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, পৃথক ঘটনায় লিবিয়ার রাজধানীর একটি শরণার্থীশিবিরে রকেট হামলায় দুজন নিহত হয়। আহত হয় কয়েকজন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ত্রিপোলিতে বিভিন্ন সেনাদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বেসামরিক লোকজনসহ ৪৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার দ্য গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) ত্রিপোলি নিয়ন্ত্রণে রাখলেও দেশটির বেশির ভাগ এলাকা বিদ্রোহী দলগুলোর দখলে রয়েছে।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ ত্রিপোলি থেকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনী হামলা চালানোর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
লিবিয়া সরকার এই সহিংসতাকে ‘শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে। সরকার বলছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে ত্রিপোলিতে চালানো এই হামলার ব্যাপারে সরকার চুপ থাকতে পারে না।
সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই সহিংসতায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চারজন শিশু।
এই সংঘাতের মধ্যে গত শুক্রবার দুদিনের জন্য ত্রিপোলির বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত অভিবাসী আটকে পড়ে।
২০১১ সালের অক্টোবরে লিবিয়ার দীর্ঘ সময়ের শাসক গাদ্দাফির পতনের পর থেকে সেখানে ন্যাটো-সমর্থিত সামরিক বাহিনী ও বিদ্রোহী সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘাত লেগেই আছে।
লিবিয়ায় সংঘাত প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, যথেচ্ছ বল প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
লিবিয়ার রাজধানীতে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি।