জাকার্তা এশিয়ান গেমসের মিডিয়া সেন্টার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গমগমে থাকে। আজ বৃহস্পতিবার সকালবেলা সেখানে চায়ের টেবিলে পরিচয় দেশলিয়ানা মৌলিপাকসির সঙ্গে। দু-এক কথার পর হঠাৎই বাংলাদেশি সাংবাদিক শুনে তাঁর মধ্যে দেখা গেল বাড়তি উচ্ছ্বাস। উচ্ছ্বাসের কারণটা বুঝতে একটু সময় লাগল। কারণ, বাংলাদেশ এশিয়ান গেমস নিয়ে এমন কিছু করেনি যে কারণে বাংলাদেশের কাউকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ানরা এত উচ্ছ্বাস দেখাবে।
খানিক বাদে বোঝা গেল মৌলিপাকসির উচ্ছ্বাসের কারণটা খেলাধুলা-সম্পর্কিত নয়। কারণটা হলো বাংলা ভাষা। মৌলি ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয় আছে তাঁর কাজের পরিধিতে। মিশতে হয় বিভিন্ন দেশের লোকজনের সঙ্গেও। সে সুবাদে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলেন আরও।
মৌলি জেনেছেন ১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সালাম, বরকত, রফিকের আত্মত্যাগের ইতিহাস। সেই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে ৩৩ বছর বয়সী এই ইন্দোনেশীয় নারী বাংলাদেশের মাতৃভাষাকে অনেক শ্রদ্ধা করেন, ভালোবাসেন। জানালেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সারা বিশ্বের মতো ইন্দোনেশিয়ায়ও পালিত হয়। তবে ছোট পরিসরে।
এসব নিয়ে প্রসঙ্গক্রমে মৌলি খুলে বসেন গল্পের ঝাঁপি, ‘এ বছরই ইন্দোনেশিয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি একটি সিনেমা মুক্তি পায়। ছবির নাম “ইয়ইস বেন”। এটির বিশেষত্ব হলো, ৮০ ভাগ সংলাপই জাভা ভাষায়। জাভা হলো ইন্দোনেশিয়ার আঞ্চলিক ভাষা। সেই আঞ্চলিক ভাষাকে তুলে ধরতেই পরিচালক ছবিটি করছেন। কাকতালীয়ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনের সঙ্গে ছবিমুক্তিও মিলে গেছে। তাই সবাই বাংলাদেশের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ছবিটি দেখেছেন আমাদের শিক্ষামন্ত্রী। এমনকি আমাদের প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোও।’
স্থানীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী সাত হাজার দ্বীপের এই ইন্দোনেশিয়ায় মোট ভাষার সংখ্যা ৬৫২। মূল ভাষা ‘ভাষা ইন্দোনেশিয়া’। প্রতিটি দ্বীপ ও অঞ্চলে আলাদা ভাষা। ‘ভাষা ইন্দোনেশিয়া’র পর টুকটাক ইংরেজিতে বেশি লোক কথা বলে, যদিও ইংরেজিতে তেমন স্বচ্ছন্দ নয়।
মৌলি বলছিলেন, ‘মাতৃভাষাকে আমরা অনেক সম্মান করি। ঠিক যেভাবে বাংলা ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছেন বাঙালিরা। এটা আমাদের অনেক প্রেরণা দেয়। উদ্দীপ্ত করে।’ শুনতে ভালোই লাগল। এমনিতে বাংলাদেশের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু নেওয়ার নেই ইন্দোনেশিয়ানদের। দেশটা অনেক উন্নত। আর্থসামাজিক অবস্থা বেশ ভালো। খেলাধুলায়ও অনেক এগিয়ে। তবে একটা জায়গায় ইন্দোনিয়েশিয়ানরা প্রেরণা নিচ্ছে আমাদের গর্বের বাংলা ভাষা থেকে।