এবার গ্রেফতারকৃত আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী। বলেছেন, কাউকে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির এই এমপি শহীদুলের আটককে গভীর উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, তাকে দ্রুততম সময়ে মুক্তি দেয়া উচিত।
হ্যাম্পস্টিড এন্ড কিলবার্নের এমপি টিউলিপ বলেন, ”শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতে শহিদুল আলমের এই গ্রেফতার খুবই হতাশাজনক। তাৎক্ষনিকভাবে এর অবসান প্রয়োজন।”
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত ৩০ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনর চলাকালে শহীদুল ফেসবুক লাইভে এসে নানা কথা বলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দেন। তিনি এই আন্দোলনকে নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি আরও বৃহৎ পরিসরে বর্ণনা করেন।
শহীদুলের দাবি, বর্তমান সরকার দেশে সুশাসন দিতে পারছে না এবং এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই এই আন্দোলন। সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
শহীদুল সেদিন এসব কথা বলেন যেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সরকারী ছাত্র, যুব ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।এ সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রী আহত এবং এসব সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে দেশী-বিদেশী বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট রাতে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে শহিদুল আলমকে তুলে নেয় ডিবি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় ৬ আগস্ট শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সাত দিনের রিমান্ড শেষে ১২ আগস্ট শহিদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নিম্ন আদালত।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এই আলোকচিত্রীর গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে দেশের পাশাপাশি আলোচনা ছড়িয়েছে দেশের বাইরেও।এখন পর্যন্ত শহিদুল আলমের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। তাকে মুক্ত করে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন অনেক নোবেলজয়ী, চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, অভিনেত্রী, সাংবাদিক, লেখক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা।
এদের মধ্যে রয়েছেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, শ্যারন স্টোন, রিচার্ড কুর্টিস, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, অরুন্ধতী রায়, নোয়াম চমস্কি সহ অনেকে। সেই তালিকায় নতুন করে যোগ হলেন টিউলিপ সিদ্দিক।
টিউলিপ প্রধানমন্ত্রীর স্বজন হিসেবে তার এই বক্তব্য যুক্তরাজ্যেও আলোচনা তৈরি করেছে। তবে আওয়ামী লীগের সেখানকার নেতারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বলে জানাচ্ছে দ্য টাইমস।