বরিশাল জেলায় ৩৭ দশমিক ৫৯ একর ভূমি উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারিখাতে ১০০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প-প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান শিল্পনগরী এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামো মেরামত এবং শিল্পনগরীতে এসএমই ইউনিট স্থাপন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী অনুন্নত এলাকা উন্নয়ন এবং উন্নত এলাকার অবকাঠামোর মেরামত ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আগামী সভায় এ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ষাটের দশকে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীটি ১৩১ দশমিক ৯৯ একর জমিতে স্থাপন করা হয়। এই জমির মধ্যে ৯৪ দশমিক ৪০ একর জমির ভূমি উন্নয়ন করা হয় এবং ৩৭ দশমিক ৫৯ একর জমির এখন পর্যন্ত কোন ভূমি উন্নয়ন করা হয়নি। এ শিল্পনগরীর উন্নত এবং অনুন্নত এলাকা মিলে মোট প্লট সংখ্যা ৪৬৩টি। তার মধ্যে উন্নত এলাকায় প্লট সংখ্যা ৩৫১টি এবং অনুন্নত এলাকায় প্লট সংখ্যা ১১২টি। উন্নত এলাকার সকল প্লট শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে এবং এসব প্লটে ১৭০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন এবং পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দর স্থাপিত হওয়ায় এ অঞ্চলের সাথে সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তাগণের মধ্যে বরিশাল শিল্পনগরীতে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনের অধিক আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ শিল্পনগরীর অব্যবহৃত ভূমি উন্নয়ন করে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে শিল্পনগরীর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতসহ শিল্প উদ্যোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মোস্তাফা কামাল উদ্দীন পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দর স্থাপন এবং পদ্মা সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন থাকায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাগণ আগ্রহী হয়েছেন। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের জন্য বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীতে নতুন ১১৪টি শিল্প প্লট তৈরি হবে যেখানে ১০০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ইউনিট স্থাপন করা যাবে। এসব শিল্প প্লটের মধ্যে ১০ শতাংশ মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। এ শিল্প ইউনিটসমূহে প্রায় আড়াইহাজার জন লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে যা, দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, তাই প্রকল্পটি অনুমোদন যোগ্য।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে দুই লাখ ৮৮ হাজার ২৮৩ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৪৪৭ দশমিক ৮৩ বর্গমিটার প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, ১১ হাজার রানিং মিটার শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর, ২০ বর্গমিটার পাম্প হাউজ, ৬৩ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার, ৩৫ হাজার ৬৮৮ বর্গমিটার রাস্তা নির্মাণ ৩০ ফুট প্রসস্থ, ১১ হাজার ১৫২ বর্গমিটার রাস্তা সোল্ডারিং, ১৩ হাজার ৪৯৫ বর্গমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ৫৮টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার সরবরাহ, ১টি ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং ১১৪টি শিল্প স্থাপনের জন্য প্লট তৈরি করা হবে।