জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির নতুন অডিও গতকাল বুধবার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ায় কোণঠাসা হয়ে পড়লেও আইএস সৈন্যদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
৫৫ মিনিটের এই অডিও বার্তা তাঁর মিডিয়া গ্রুপ আল ফুরকানে প্রকাশ করা হয়। তবে অডিও কণ্ঠটি আল-বাগদাদির কি না, এ ব্যাপারে রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি। গত সেপ্টেম্বরে তাঁর আগের অডিওটি প্রকাশ পেয়েছিল।
এবারের অডিও বার্তায় আল-বাগদাদি কানাডা ও ইউরোপে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় ধন্যবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের ‘লড়াকু সিংহ’ বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে হুমকি দিয়ে বলেন, তাদের জন্য ‘আতঙ্ক’ ছড়াতে জিহাদিরা প্রস্তুত। দুটি দেশই আইএসের বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থন দিয়ে আসছে। অডিও বার্তায় ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানানোয় ধারণা করা হচ্ছে, অডিওটি হয়তো সাম্প্রতিক সময়ের।
আরবি ভাষায় দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মুজাহিদিনদের জন্য জয় বা পরাজয় একটি শহর দখল বা আকাশে শ্রেষ্ঠত্ব, আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বা আধুনিক বোমার ওপর নির্ভর করে না। সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে থাকা তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘হে খিলাফতের সেনারা…তোমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখো।’
আইএস ২০১৪ সালের জুন মাসে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান শহর মসুল দখল করে। এরপর সুন্নি আরব দেশটির বেশির ভাগ এলাকা দখলে নিয়ে ইরাক ও সিরিয়াজুড়ে ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে আইএস। গত বছর পর্যন্ত সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন অঞ্চল ছিল আইএসের দখলে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় উভয় দেশে একের পর এক এলাকা হারাতে থাকে আইএস। ধারণা করা হয়, আইএসের স্বঘোষিত খিলাফতের পতনের পর এখন তিনি ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে আত্মগোপনে আছেন।
আল-বাগদাদি এই আন্দোলনের নেতাদের প্রতি অনুগত থাকার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সৌদি আরব, বাহরাইন ও জর্ডানের নাগরিকদের তাদের শাসকদের উৎখাতের আহ্বান জানায়। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় তাদের অনুসারীদের প্রতি বলেন, আল্লাহ চায়তো খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে পুনরায় গড়ে তুলতে সৌদি সরকারের দেওয়া ১০ কোটি ডলারের সমালোচনা করেন।
একই সঙ্গে সতর্ক করে দিয়ে আল-বাগদাদি বলেন, রাশিয়া ও সিরিয়া সরকারের যৌথ বাহিনী হাতে সিরিয়ার ইদলিব শহরের পতন ঘটবে। এই প্রদেশটিই এখন কেবল বিদ্রোহীদের দখলে।
গত জুনে জাতিসংঘের আঞ্চলিক মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়ক সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, আইএস ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ইদলিবের মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এর ফলে ‘ভয়ংকর বিস্ফোরক’ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।
ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে আইএসকে বিতাড়িত করার সময় থেকে আত্মগোপনে থাকা এই নেতা মারা গেছে বা আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে। এ বছরের শুরুর দিকে আইএসের নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, সিরিয়ার হোমস শহরে আল-বাগদাদির এক ছেলে নিহত হয়।
তবে ইরাকের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গত মে মাসে জানিয়েছেন, আল-বাগদাদি ইরাকের সীমান্তে সিরিয়ায় আত্মগোপন করে আছেন। তাঁকে ধরার জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।